ব্যবসায় জমজমাট পুরান ঢাকা, খাতা-কলমের চেয়ে জবানেই বেশি চলে বেচাকেনা

৩ সপ্তাহ আগে
দেশের ভোগ্যপণ্য বাজারের বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ হয় পুরান ঢাকা থেকে। শত শত বছর আগে, সেই গোড়াপত্তন থেকে সমান ব্যস্ততা চোখে পড়ে মৌলভীবাজার, শ্যামবাজারসহ পুরান ঢাকার বাজারগুলোতে। আরব্য ধাঁচ থেকে সরে এলেও এখনও কাপড়ের বড় ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে জৌলুস ধরে রেখেছে বুড়িগঙ্গা পাড়ের ইসলামপুর। ব্যবসায়িক লেনদেনে যেমন হিসাব রাখা হয় খাতা-কলমে; তেমনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয় প্রতিশ্রুতি রক্ষায়।

দেশের অন্যতম শীর্ষ পাইকারি ব্যবসার কেন্দ্র রাজধানী ঢাকার মৌলভীবাজার। পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশেই এর অবস্থান। দেশের অন্যতম বড় এই ভোগ্যপণ্যের বাজারের গোড়াপত্তন দুইশ বছর আগে। প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার লোকের সমাগম হয় এখানে, আর হাত বদল হয় কয়েকশ' কোটি টাকার পণ্য।

 

রাজধানী ঢাকার মৌলভীবাজার। ছবি: সময় সংবাদ

 

আরও পড়ুন: পুরান ঢাকার কোন হোটেল কোন খাবারের জন্য বিখ্যাত?

 

সময়ের ব্যবধানে চালের ব্যবসা বাবুবাজার-বাদামতলীতে, পেঁয়াজ, রসুন ও আদা শ্যামবাজারে আর রহমতগঞ্জে সরে গেছে এখানকার ডালের ব্যবসা। তবে ভোজ্যতেল, চিনি, মসলা ও গুঁড়ো দুধের ব্যবসার জৌলুস এখনও ধরে রেখেছে ঢাকার ব্যস্ততম এই বাজার।

 

ঢাকার মৌলভীবাজারে মসলার দোকারে ভিড়। ছবি: সময় সংবাদ

 

ব্যবসায়ীরা জানান, আগে মৌলভীবাজারে টিনের চালার দোকানে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম চলতো। তবে এখন প্রায় সব দোকানেই ইট-পাথরের। এখানকার পণ্য সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।

 

মৌলভীবাজারের পাশেই চকবাজার। মুঘল আমলে গোড়া পত্তন হওয়া চকবাজারের ইফতারি পণ্যের খ্যাতি দেশজুড়ে। সর্বদা ব্যস্ত সময় পাড়ি দিয়ে চলা এই বাজারটি সারাদেশের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে পরিণত হয়েছে এক নির্ভরযোগ্য স্থানে।

 

ঢাকা শহর তো বটেই, এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায় প্রসাধনী, ইমিটেশন গয়না, খেলনাসহ নানা পণ্য।

 

ঢাকার চকবাজারের গহনার দোকান। ছবি: সময় সংবাদ

 

রাজধানীর চকবাজারের পাইকারি খেলনার দোকান। ছবি: সময় সংবাদ

 

চকবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে পণ্য কিনতে আসেন। সাধারণ মানুষও আসেন। সারাদিনই মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে পুরো চকবাজার।

 

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আরেকটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র শ্যামবাজার। ব্রিটিশ শাসনামলে বুড়িগঙ্গার পাড়ে গড়ে ওঠা এই বাজার দিনরাত ব্যস্ত দেশজুড়ে পেঁয়াজ, মরিচ, আলু, রসুন, আদা, হলুদ সরবরাহে।

 

বুড়িগঙ্গা তীরের শ্যামবাজার খেয়াখাট। এখান দিয়ে ট্রলারে পারাপার হচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন ও আদা। ছবি: সময় সংবাদ 

 

শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, আগে শ্যামবাজার থেকেই সারাদেশে পেঁয়াজ-আদা-রসুন ও আলুর মতো পণ্য সরবরাহ হতো। তবে এখন দেশের অন্যান্য জায়গাতেও আড়ত হওয়ায় জৌলুস কিছুটা কমেছে।

 

দেশি-বিদেশি ফলের জন্য বিখ্যাত পুরান ঢাকার বাদামতলী ও ওয়াইজঘাট ফলের আড়ত। সারাদেশে আমদানি করা ফলের চাহিদার প্রায় সবটুকুই জোগান দেন এখানকার আড়তদাররা।

 

পুরান ঢাকার বাদামতলীতে ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে ফল। ছবি: সময় সংবাদ

 

তারা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফল আমদানি করে এই আড়তগুলোতে আনা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা পাইকারি দামে ফল কিনে নিয়ে যান।

 

ঢাকার বাদামতলীতে ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে ফল। ছবি: সময় সংবাদ

 

৪০০ বছরের পুরোনো ঢাকায় এখনও একই আমেজ নিয়ে টিকে আছে যে কয়টি জায়গা, এর মধ্যে অন্যতম ইসলামপুর। আরব্য ধাঁচের বাজার থেকে পরিণত হয়েছে কাপড়ের এক বিশাল ব্যবসায়িক কেন্দ্রবিন্দুতে। এখানে তৈরি পোশাক, সুতা-কাপড় সবই মিলে পাইকারি দরে।

 

পুরান ঢাকার ইসলামপুরের পাইকারি কাপড়ের মার্কেট। ছবি: সময় সংবাদ

 

ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা জানান, ইসলামপুরের তৈরি পোশাক, সুতা-কাপড় দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি সেল দেয়া হয়। ক্রেতা-বিক্রেতার হাক ডাকে সারাদিনই মুখর থাকে ইসলামপুর এলাকা।

 

আরও পড়ুন: সাকরাইন উৎসব / ঘুড়ি-নাটাইয়ের সূতিকাগার শাঁখারীবাজার

 

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে দৈনিক শত কোটি টাকার যে ব্যবসা হয়; তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাকা খাতা সংরক্ষণ করার চেয়ে ব্যবসায়িক লেনদেনে দেয়া জবান রক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দেন ব্যবসায়ীরা।

 

পুরান ঢাকার এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এলেই বোঝা যায় বিশ্বাসেই বাড়ে ব্যবসার পরিসর; আস্থার বন্ধনেই অটুট হয় ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন