বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল থেকে থেমে থেমে ঝিরিঝিরি ও মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহীতে। বইছে দমকা বাতাস। এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও এদিন গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট ঘুরে দেখা যায়, কোরবানিকে সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে গরু। দুপুর তিনটা পর্যন্ত ছোট-বড়-মাঝারি আকারের গরু, কয়েক বছর লালন পালনের পর বিক্রির জন্য হাটে তুলেছেন খামারিরা। এদিন সরবরাহ বেশি থাকায় মূল হাটের আশেপাশেও গরু বিক্রির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন ক্রেতারা।
হাটে ক্রেতা আনাগোনা থাকলেও বিক্রি ছিল কিছুটা কম। অধিকাংশই দেখেছেন, যাচাই করছেন দাম।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, ছোট আকারের দুই থেকে চার মন ওজনের গরু, বিক্রি হয়েছে ষাট হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে। মাঝারি আকারের চার থেকে ছয় মন ওজনের গরুর দাম, ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে। ছয় থেকে ১০ মন ওজনের গরু, ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। বিশাল আকারের গরু এই বাজারে তেমন ছিল না।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় প্রস্তুত কোরবানির পশু, গো-খাদ্যের বাড়তি দামে লাভ নিয়ে শঙ্কা
রাজশাহী গোদাগাড়ীর বাউটিয়া গ্রামের মোসলেম আলী জানান, বাজারে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার গরুর চাহিদা বেশি। যারা ছোট গরু বাজারে এনেছেন তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন। বড় গরুর চাহিদা কম থাকায় বিক্রিও কম। খুব বেশী লাভ হচ্ছে না।
গোদাগাড়ী গ্রামের সুরসুড়িপাড়া গ্রামের খামারি ইসলাম বলেন, পশু পালনে খরচ বেড়েছ। কিন্তু সে তুলনায় মিলছে না দাম। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত বছর ২ হাজার টাকায় যে খড় পাওয়া যেত এবছর তার দাম ৩ হাজার টাকা। ভূষি, খুদ, কুড়ার দামও প্রায় আগের তুলনায় ৫০ ভাগ বেড়েছে। খরচ বাড়লেও গরুর দাম আগের মতোই।
গোদাগাড়ির ললিতনগর গ্রামের তোতা আলীর ভাষ্য, বৈরি আবহাওয়ার জন্য ক্রেতা কম। এছাড়াও বিগত বছরগুলোতে যারা বড় বড় গরু কিনতেন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারনে তাদের বেশিরভাগ পলাতক। ফলে বাজারে গরু বেচাকেনা কম। সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ। এ কারণে বড় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা।
আশাবুল নামের এক ব্যাপারী বলেন, যারা পলাতক তারা অনেক টাকার মালিক ছিল। অনেকগুলো কোরবানি দিত। বড় থেকে শুরু করে পাতি নেতারাও গরু কিনত। সেই অংশটা বাজারে না আসায় চাঙ্গা ভাবটা নেয়।
বিদিরপুরের ক্রেতা মোসলেম জানান, সবাই এক ধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বড় অংকের টাকা খরচ করতে চাচ্ছে না। ফলে আগের মতো জমজমাট বাজার এখনও শুরু হয়নি।
দামকুড়ার আব্দুর রশীদ বলেন, ‘ঘুরে ঘুরে গরু দেখছি। বাজেট আর পছন্দ মতো হলে তবেই কিনব।’
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে কোরবানির হাট জমজমাট, গরুর দাম ২০ হাজার থেকে সাড়ে ৫ লাখ
গোদাগাড়ির মুনদাপুর গ্রামের মুনসুর জানান, বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে বলায় তিনি অপেক্ষা করছেন। কয়েক হাট ঘুরে গরু কিনবেন।
গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি, কাকঁনহাট ও সিটি হাটের ইজারাদার শওগত আলী। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা যে এখনও স্থিতিশীল না, তার বড় প্রমাণ কোরবানি বাজার। কোনো হাটেই জমজমাট বেচাকেনা হচ্ছে না। বড় গরুর বিক্রি নেই বললেই চলে। বড় গরুর খামারিদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তবে শেষ দিকে গরু বিক্রি বাড়বে বলে প্রত্যাশা এই ইজারাদারের।
ইজারাদাররা বলছেন, হাটে পর্যপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন তারা।