শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ানবাজারসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
রাজধানীর বাজারে বেশ কিছুদিন ধরেই স্থিতিশীল ছিল ডিমের দাম। তবে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে ডজন প্রতি ডিমের দাম বেড়েছে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা।
আরও পড়ুন: ইলিশের বাজার চড়া, স্বস্তি নেই সবজি-চালে
বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১২০ টাকা। আর প্রতি ডজন সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। আর প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৩০ টাকায়।
এছাড়া প্রতিকেজি দেশি মুরগি ৬০০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩১০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে পর্যাপ্ত মুরগি আসতে পারছে না। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। মুরগি বিক্রেতা দিদার বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে খামার থেকে পর্যাপ্ত মুরগি আসছে না। তাই সরবরাহ কমে গেছে, আর দাম বেড়ে গেছে।’
আরও পড়ুন: খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে
তবে গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন পরিবর্তন নেই। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায়।
এদিকে বৃষ্টির অজুহাতে কোনো সবজিতে আরও বেড়েছে দাম, তবে কমেছে কয়েকটিতেও। বাজারে প্রতিকেজি কচুরমুখী ৩০-৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, গাজর ৫০-৬০ টাকা ও কহি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া করলা ৬০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা ও ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। আর লাউ প্রতি পিস ৬০-৭০ টাকা ও চালকুমড়া প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, কোনো কোনো সবজিতে ৫-১০ টাকা বাড়লেও কোনো কোনো সবজিতে দাম কমেছে। মূলত অতিবৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ব্যাঘাত ঘটছে সরবরাহ ব্যবস্থায়। রাজধানীর সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন,
বৃষ্টির কারণে অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় কিছু সবজির দাম বেড়েছে। তবে কিছু সবজির দাম কমেও গেছে।
বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হাসিব রহমান বলেন, ‘একেক দিন একেক জিনিসের দাম বাড়ছে। কী কিনবো, আর কী ফেলে যাবো বুঝতে পারি না। কিছু কিছু সবজির দাম কমেছে। তবে বেড়েছে বেশিরভাগ সবজির। বৃষ্টির অজুহাত দিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।’
এদিকে বাজারে আলু ও রসুনের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়ে গেছে পেঁয়াজ ও আদার দাম। বাজারে প্রতিকেজি আলু ২০-২৫ টাকা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৩০ টাকায়। আর কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি আদায় গুনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা পর্যন্ত।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় খুচরায়ও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজ বিক্রেতা নাসির বলেন,
পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। খুচরায় তো কিছু করার নেই। পাইকারিতেই কিনতে হচ্ছে ৬২-৬৫ টাকায়। আমাদের লাভ প্রায় নেই বললেই চলে।
বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০-২৬০০ টাকায়। এছাড়া ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৬০০-১৭০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২১০০-২২০০ টাকা ও দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩২০০ টাকায়।
আরও পড়ুন: ‘হিসাবকিতাব বুঝি না, বাজারে স্বস্তি চাই’
চড়া অন্যান্য মাছের দামও। প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩০, কৈ ২০০-২২০ এবং পাবদা ও শিং বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। আর চাষের ট্যাংরা প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও মলা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারে মাছ কিনতে আসা হোসেন আলী বলেন, ‘ইলিশ তো সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। এখন বোয়াল, কোরাল, পাবদারও যে দাম- মাসের শেষে হিসাব মিলাতে কষ্ট হয়।’
চালের বাজারে নতুন করে দাম না বাড়লেও আগের উচ্চমূল্যই ভোগাচ্ছে ক্রেতাদের। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, নতুন করে দাম বাড়েনি। তবে কমারও কোনো সুখবর নেই। বর্তমানে মিনিকেট চালের কেজি ৮২-৮৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮৫-৯২ টাকা এবং মোটা চাল ৫৬-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
]]>