মোহরে ফাতেমি কী, বর্তমান কত টাকা?

৬ ঘন্টা আগে
মোহর নারীর অধিকার। মোহর পরিশোধ করা ইসলামের বিধান। মোহর শুধু একটা অঙ্ক ধরে রাখার নাম নয়। তা পরিশোধ করে দিতে হবে। মোহরের মূল উদ্দেশ্য, নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া। যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে আসবে, তখন তাকে মর্যাদার সঙ্গে আনবে। এমন কিছু উপহার দেবে, যা তার মর্যাদা বাড়ায়।

মোহর এতো অল্প নির্ধারণ না করা যাতে মর্যাদার কোনো ইঙ্গিত না থাকে। আবার এতো অধিকও নির্ধারণ না করা, যা পরিশোধ করা স্বামীর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ কন্যা হযরত ফাতিমা (রা.)-কে হযরত আলি (রা.) সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার সময় যে দেনমোহর নির্ধারণ করেছিলেন, তাকেই মোহরে ফাতেমি বলে।

 

মোহরে ফাতেমি কী?

 

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ কন্যা হজরত ফাতিমা (রা.)-কে হজরত আলী (রা.)-এর সঙ্গে বিয়ে দেয়ার সময় যে মোহর নির্ধারণ করেছিলেন, তাকেই মোহরে ফাতেমি বলে।

 

মোহরে ফাতেমি বর্তমান কত টাকা?

 

হজরত ফাতিমা (রা.) ও হজরত আলি (রা.)-এর বিয়েতে মোহর হিসেবে দিয়েছিলেন ৫০০ দিরহাম। আধুনিক হিসেবে ১৩১.২৫ তোলা বা ১.৫৩০৯ কিলোগ্রাম রূপা। এক দিরহামের ওজন হলো ৩.০৬১৮ গ্রাম। বর্তমান বাজারে প্রতি তোলা রূপার মূল্য ১ হাজার ৭০০ টাকা হলে মোহরে ফাতেমির মূল্য হবে ২ লাখ ২৩ হাজার ১২৫ টাকা। তবে মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন সময় রূপার দাম ওঠানামা করে। তাই, অবশ্যই যখন যেমন দাম হবে সে অনুযায়ী কম বেশি হবে।

 

বিয়ের সময় মোহরে ফাতেমি দেওয়া আবশ্যক নয়। কোনো স্বামীর যদি মোহরে ফাতেমি নির্ধারণের মতো আর্থিক সচ্ছলতা না থাকে তাহলে তার সামর্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। স্বামীর সামর্থ্যের বাইরে মোহর ধার্য করা ইসলামের শিক্ষা বহির্ভূত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

 

সাবধান, তোমরা নারীদের মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। যদি মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা দুনিয়াতে সম্মানের বিষয় হত কিংবা মহান আল্লাহর কাছে তাকওয়া হত তাহলে তোমাদের নবী তা করতেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১১৪) 

 

পবিত্র কোরআনে মোহরের আলোচনা

 

ইসলাম স্বভাবজাত ধর্ম। মানুষের সকল চাহিদার সুষ্ঠু সমাধান রয়েছে ইসলামে। মহান আল্লাহ নারী-পুরুষের চরিত্র পবিত্র ও নিষ্কলুষ রাখতে বিয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,



فَانۡکِحُوۡا مَا طَابَ لَکُمۡ مِّنَ النِّسَآءِ مَثۡنٰی وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ ۚ فَاِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تَعۡدِلُوۡا فَوَاحِدَۃً  তোমরা বিয়ে করো তোমাদের পছন্দের নারীদের থেকে, দুজন অথবা তিনজন অথবা চারজন; কিন্তু যদি আশঙ্কা করো যে তোমরা ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে পারবে না, তাহলে মাত্র একজন। (সুরা নিসা, আয়াত: ৩)

 

আরও পড়ুন: দেনমোহরের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমাণ

 

দেনমোহর সম্পূর্ণ নারীর অধিকার। এ অধিকার খর্ব করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

 

وَ الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ الۡمُؤۡمِنٰتِ وَ الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ اِذَاۤ اٰتَیۡتُمُوۡهُنَّ اُجُوۡرَهُنَّ مُحۡصِنِیۡنَ غَیۡرَ مُسٰفِحِیۡنَ وَ لَا مُتَّخِذِیۡۤ اَخۡدَانٍ আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারীদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো। যদি তোমরা তাদের দেনমোহর প্রদান করো বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। (সুরা মায়েদা. আয়াত : ৫) 

 

মোহরের পরিমাণ 

 

মোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারিত নয়। যার যার অবস্থান অনুযায়ি মোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করবে। তবে সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারিত। সর্বনিম্ন পরিমাণের কমে মোহর ধার্য করা যাবে না। অনেকে নিজেকে খুব বেশি উদার প্রমাণ করার জন্য মোহর ছাড়াই বিয়ে করেন। এটা খামখেয়ালিপনা। ইসলামি শরিয়তের বিধান হলো- বিয়েতে সর্বনিম্ন দেনমোহর ১০ দিরহাম। অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা। ১০ দিরহামের কম পরিমাণ মোহর নির্ধারণে স্ত্রী রাজি হলেও তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না। 

 

নবীজি সাল্লাহল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

 

১০ দিরহামের কম কোনো দেনমোহর নেই।’ বায়হাকি শরীফ, ৭/২৪০)। বাজারের তারতম্যের ভিত্তিতে পৌনে তিন ভরি খাঁটি রুপার মূল্য যখন যে হারে হয়- দেনমোহরের সর্বনিম্ন মূল্যও তখন তা হবে। স্ত্রীর বংশ ও তার সমমানের নারীদের দেনমোহরের পরিমাণ বিবেচনা করাও উচিত। (বাদায়েউস সানায়ে : ২য় খণ্ড, ২৭৫ পৃষ্ঠা)।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন