মেহেরপুর জেলা মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার। ১৯৮৩ সালে চালু হওয়া এই খামারটি থেকে জেলার চাহিদা অনুযায়ী মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদন করে মাছ চাষিদের মাঝে সরবরাহ করার কথা থাকলেও হচ্ছে না সে কার্যক্রম। বর্তমানে খামারটি অনেকটাই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
পোনা উৎপাদনের জন্য থাকা পুকুরগুলো অযত্নে অব্যবহৃত। যেটুকু পোনা উৎপাদন হয়, তারও বেশিরভাগই সরকারি অবমুক্তকরণ কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হয়। ফলে জেলার চাহিদা মেটাতে অন্য জেলা থেকে পোনা আমদানি করতে হয় মাছ চাষিদের। এতে খরচও বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: দুই যুগ ধরে অচল নেত্রকোনার মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, বিপাকে চাষিরা
জেলার মাছচাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবি, দ্রুত মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার থেকে মাছের রেণু ও পোনা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সদর উপজেলার তেরোঘরিয়া গ্রামের মাছচাষি আফজাল হোসেন বলেন, ‘চলতি বছর নয়টি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেছি, লাভও হয়েছে। কিন্তু পোনা পরিবহনে অনেক খরচ হয়। বাইরে থেকে পোনা আনতে এবং বিক্রির সময় আবার জেলার বাইরে পাঠাতে হয়। এখানে যদি পোনা উৎপাদন হতো, তাহলে খরচ অনেক কমে আসতো।’
আরেক মাছচাষি স্বপন হালদার বলেন, ‘এখানে একটি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার আছে, অনেকেই তা জানেই না। যদি এই খামার থেকে পোনা পাওয়া যেত, তাহলে মাছচাষ আরও বাড়তো।’
খামার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বালুমাটি, আয়রনযুক্ত পানি, পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাব এবং জনবল সংকটের কারণে রেণু ও পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক ইকবাল শরীফ জানান, ‘বালুমাটির কারণে পুকুরে পানি সংরক্ষণ সম্ভব হতো না। ছয়-সাত বছর আগে পুকুরের নিচে পলিথিন দিয়ে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। তবে তাতেও ভালো ফল মেলেনি।’
আরও পড়ুন: মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার / এক যুগ ধরে রেণু উৎপাদন বন্ধ, দায় কার
তিনি আরও বলেন, ‘পানিতে আয়রন থাকার কারণে পোনা উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে। আইওটি বেজড পুকুর তৈরির পরিকল্পনা আছে। পাশাপাশি জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পানি শোধনাগার স্থাপন, পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও জনবল সংকট দূর করতে পারলে রেণু ও পোনা উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।’
জেলায় হ্যাচারি তৈরির জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাধন চন্দ্র সরকার জানান, ‘জেলায় বেসরকারি খাতে হ্যাচারি স্থাপনের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। যারা হ্যাচারি স্থাপন করতে চান, তাদের পাশে থাকবে মৎস্য বিভাগ।’
উল্লেখ্য, মেহেরপুরে বর্তমানে ৪৪৯৫ হেক্টর জলায়তনে মাছ চাষ করছেন ৬ হাজার ৯০৯ জন। জেলার নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২ হাজার ২৩০ জন।
]]>