বেপরোয়া ওভারটেকিংয়ে ঘটে দুর্ঘটনা, তদন্ত কমিটি গঠন

২ সপ্তাহ আগে
ফরিদপুরে খানাখন্দে ভরা সড়কে লোকাল বাসের বেপরোয়া গতির কারণেই সড়ক দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হন। প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে প্রশাসন জানিয়েছেন। এ ছাড়া লোকাল বাসের চালকদের অদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহতের স্বজনরা। ঘটনা তদন্তে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা।

মঙ্গলবার (০৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর জেলা সদরের ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের বাখুণ্ডা এলাকার শরীফ জুট মিলের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে ৫ জন মারা যান এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও দুজন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।


নিহতদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও তিনজন নারী রয়েছেন। তারা হলেন: নগরকান্দা উপজেলার শেয়ারকান্দি গ্রামের জোয়ার সরদার (৬৫), তার ছেলে ইমান সরদার (২৮), কাঠিয়া বড়গ্রামের রাজিব খানের স্ত্রী দীপা খান (৩৪), জেলা সদরের চরচাঁদপুর গ্রামের বলরাম সরকারের স্ত্রী মালতী সরকার (৪০), জেলা শহরের মোল্লাবাড়ি সড়ক এলাকার ফজিরুন নেছা (৬০), চরভদ্রাসন উপজেলার হাজিগঞ্জের আলম মিয়া (৪০) ও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার পূর্ব ফকিরপাড়ার আজিবুর হোসেন (৪০)।


এ দিকে বিকেল ৩টার দিকে নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।


আরও পড়ুন: ফরিদপুরে বাস উল্টে নিহত ৭, আহত ২৯


ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, গোপালগঞ্জ জেলার মোকছেদপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ফারাবি এন্টারপ্রাইজ নামে লোকাল বাসটি বাখুণ্ডা এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এরপর সেটি সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে খাদে উল্টে পড়ে যায়।

 

খবর পেয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশের সদস্যরা।
বাসটি অতিরিক্ত গতিতে চালানোর কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত লেনে চলে গিয়ে সড়কের পাশে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা লাগে বলে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান জানিয়েছেন।


তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সড়কটিতে খানাখন্দ রয়েছে। এই খানাখন্দ সড়কে বাসটির চালক অতিরিক্ত গতিতে চালাচ্ছিলেন।


আরও পড়ুন: ‘আমার আব্বাও নাই ভাইও নাই, আমি এখন কী করব?’


এ বিষয়ে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, ‘গাড়িটি বাম লেনে থাকার কথা ছিল কিন্তু ডান লেনে চলে যায়। এ ছাড়া বাসটির চালক অতিরিক্ত গতিতে ওভারটেকিং করতে গিয়ে মূলত এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।


দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত জাহান। তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বাসের গতি ৮০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ছিল। চালকের বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।


এ দিকে দুর্ঘটনার পর ক্ষোভ জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা। তারা এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।


নিহত জোয়ার সরদারের বড় ছেলে সাহেদ সরদার অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছু চালক লাইসেন্স ছাড়া, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালায়। সেই কারণে আমাদের মা-বোনের প্রাণ যাচ্ছে। আজ যদি চালকরা নিয়ন্ত্রণে রেখে গাড়ি চালাতো, আমার বাবা ও ভাই মারা যেত না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’


এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা জানান, এ দুর্ঘটনার কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন ও সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


এ ছাড়া নিহত প্রতিটি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে দাফনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা দেয়া হবে এবং পরবর্তীতে বিআরটিএর মাধ্যমে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন