এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি কেজি চা উৎপাদনে পিছিয়ে রয়েছে। চা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন সম্ভব হবে।
মৌলভীবাজার জেলার পাহাড় টিলায় যতদূর চোখ যায় কেবল সবুজ আর সবুজের হাতছানি। টানা কয়েক মাস খরার পর বৃষ্টির পানি পেয়ে বদলে গেছে মৌলভীবাজার জেলার চা-বাগানগুলো। কচি পাতায় রং লেগে পরিণত হয়েছে সবুজের গালিচায়। ভোর থেকেই এ কচি পাতা উঠাতে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন- নারী শ্রমিকেরা। যে যত বেশি চা পাতা উঠাতে পারবে- সে ততই লাভবান।
এতে বিরামহীন নারী চা-শ্রমিকেরা পাতার তোলার কাজ করছেন। তবে এ বছরের দীর্ঘস্থায়ী খরা চা-বাগানের চারাসহ ব্যাপক আকারে চা গাছ মারা গেছে। বাগান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত চা-গাছের অনেকটা উন্নতি হয়েছে। সেইসঙ্গে রোদের তাপে ঝলসে যাওয়া চা গাছগুলোতে দুটি পাতা একটি কুড়িতে ভরে উঠছে।
আরও পড়ুন: চা বাগানে নারীদের ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা হবে: ড. সাখাওয়াত
তবে উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে এ বছর চা-গাছে কচিপাতা আসছে অনেক বিলম্বে। সেইসঙ্গে গত বছরের তুলনায় গাছে পাতার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে অনেক কম। এতে শ্রমিকেরা প্রয়োজনমতো পাতা না পেয়ে তাদের নিরিখ পূরণ করতে পারছে না। একইসঙ্গে এই ভরা মৌসুমে এসে পর্যাপ্ত পাতার অভাবে জেলার ৯৩টি চা বাগানের অধিকাংশ বাগানের কারখানা চালু করা যায়নি।
দেশের প্রতিষ্ঠিত ফিনলে চা-কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, তাদের ৮টি কারখানায় চা উৎপাদন হয়ে খাকে। এ অবস্থায় বর্তমানে মাত্র ৩ থেকে ৪টি কারখানা চালু রয়েছে। বাকি কারখানাগুলো পাতার ওভার চালু করা যাচ্ছেনা। তবে চালু থাকা কারখানায়ও পর্যাপ্ত পাতা পাওয়া যাচ্ছে না।
এম আর খান চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হারুন জানান, চলতি বছর টানা খরায় চা বাগানে চায়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
একইভাবে শ্রীমঙ্গল ক্লোনেল চা-বাগানের ব্যবস্থাপক রনি ভৌমিক জানান, খরায় চা বাগানে চা গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিপাতে বর্তমানে চা গাছে নতুন পাতা আসছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় কচি পাতা খুবই কম। এতে কারখানা চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: মৌলভীবাজার / চা বাগানগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়
চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের সিংহভাগ চা উৎপাদনকারী জেলা মৌলভীবাজারে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদনে পিছিয়ে রয়েছে। দেশের ১৬৭টি বাগানে গত বছরের চেয়ে প্রায় ১ কোটি কেজি চা উৎপাদনে পিছিয়ে আছে।
ট্রি ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এস এন ইসলাম মুনির বললেন, বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এতে এ বছর চায়ের গুণগতমান ভাল পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ টি-অ্যাসোসিয়েশন সিলেট শাখার চেয়ারম্যান ও দেশের বিশিষ্ট চা বিশেষজ্ঞ জি এম শিবলী জানান, আগামী মাসগুলোতে বৃষ্টিপাতের সংখ্যা বাড়লে চায়ের উৎপাদন বাড়বে। এতে উৎপাদন ঘাটতি কাটানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ চা-বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছর দেশে ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
]]>