বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের বেতালপাড়া বাজারে এ শোকসভা হয়। এর আগে গত ১৮ জুন নিজ বাড়িতে মারা যান এ প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির যশোর জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহরাব উদ্দিন মাস্টারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির, বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শ্রমিকনেতা শাহ আলম ভূঁইয়া, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্তসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
এছাড়া আব্দুল খালেক লস্করের বড় ছেলে নেওয়াজ শরীফ, মেজ ছেলে বণিক বার্তা পত্রিকার মফস্বল সম্পাদক সাইফ উদ দৌলা রুমি, সেজ ছেলে সময় টিভির যুগ্ম বার্তা সম্পাদক নাজিম উদ দৌলা সাদি ও ছোট ছেলে রাকিব উদ দৌলা রাব্বি শোকসভায় বাবার স্মৃতিচারণ করেন।
আমৃত্যু বিপ্লবী প্রখ্যাত কৃষকনেতা ডা. আব্দুল খালেক লস্কর ১৯৪২ সালে ১৫ নভেম্বর যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার জহুরপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আজিজুর রহমান লস্কর ছিলেন এলাকার ভূস্বামী।
আব্দুল খালেক লস্কর ১৯৫০ সালের দিকে প্রেমচারা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে খাজুরা এমএন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি একজন কৃতি ফুটবলারও ছিলেন। খাজুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে পরিচয় হয় সংগ্রামী নেতা কমরেড আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচন বর্জন প্রক্রিয়ায় সামিল ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টিতে (এমএল) যোগ দেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন খালেক লস্কর।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক সাদির বাবার মৃত্যুতে ডিএসইসি’র শোক
দেশ স্বাধীনের পর যুবলীগ-রক্ষীবাহিনীর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তিনি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় তার নেতৃত্বে এলাকা মুক্তাঞ্চল ঘোষিত হয়। তার এলাকায় পার্টির নেতৃত্বে বিচার কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে মকসেদ আলী মোল্যাকে মনোনিত করা হয়। এই কমিটির সিদ্ধান্তে এলাকার ভূ-স্বামীদের ফসল দখলের কর্মসসূচি গ্রহণ করা হয়। অসংখ্য গরিব ও ভূমিহীন কৃষকদের অংশগ্রহণে প্রথমে তার বাবা আজিজুর রহমান লস্করের জমির ফসল কেটে নেয়া হয়। এ ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক পুলিশ-রক্ষীবাহিনী তাণ্ডব শুরু হয়। গ্রেফতার এড়াতে আব্দুল খালেক লস্কর ঝিনাইদহ জেলার হলিধানী বাজারে ঘরভাড়া নিয়ে ডাক্তারি শুরু করেন। সত্তরের দশকের শেষের দিকে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার এবং পাঁচ বছরের সাজা হয় তার। ১৯৮২ সালে তিনি কারামুক্ত হন।
কারামুক্ত হয়ে তিনি কিছুদিন মাগুরায় চিকিৎসা সেবা দিতেন এবং কৃষক সংগ্রাম সমিতির মাগুরা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। পার্টি করার কারণে স্থানীয় আওয়ামী-যুবলীগের লোকেরা তার গ্রামের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও পরিবারের সদস্যদের মারপিট পর্যন্ত করে। বাড়ির গরু-বাছুর লুট করে নিয়ে যায়।
তিনি ২০১০ সালে কৃষক সংগ্রাম সমিতির যশোর জেলা কমিটির সভাপতি, এরপর কেন্দ্রীয় সদস্য, ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের যশোর জেলা সহ-সভাপতি ও সর্বশেষ ২০১৯ সালের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।