বিয়ে না করেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়তে হলো চীনা যুবককে, তবুও ছাড়েননি হাল

২ সপ্তাহ আগে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা গ্রামের কোনাপাড়ার সুরমা আক্তারকে বিয়ে না করেই বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় চলে যান চীনা নাগরিক তাওজেন। টিকিটের ব্যবস্থা করে সেখান থেকেই তিনি চীনে রওয়ানা হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

প্রেমের টানে চীন থেকে গত ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের নাসিরনগরে আসেন চীনা যুবক ওয়াং তাওজেন। সুরমাকে বিয়ে করতেই তার ছুটে আসা। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এলাকার বাসিন্দা প্রেমিকা সুরমা জানায়, তিনি ঢাকায় চাকরি করেন। দেড় মাস আগে ‘ওয়াল টক’ নামে একটি অ্যাপস এর মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। এর পর ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুই পরিবারের সম্মতির মাধ্যমে তাদের বিয়ের বিষয়ে একমত হলে তাওজেন বাংলাদেশে আসেন। এয়ারপোর্ট থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কয়েকদিন ধরে তাদের বিয়ে পড়ানোর চেষ্টা করছে পরিবার। নানা কারণে সেটা হয়ে উঠেনি।

 

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের  কুন্ডা গ্রামে আসার পর চীনা নাগরিককে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। দিনভর ওই নারীর বাড়িতে লোকজন এসে নানান কথা বলতে থাকেন। কেউ কেউ এমনও বলেন যে, সুরমার পরিবার কোটি টাকার বিনিময়ে তাকে চীনের নাগরিকের হাতে তুলে দিচ্ছেন। চীনা নাগরিক তাওজেন সুরমাকে তার দেশে নিয়ে বিক্রি করে দিবেন বলেও সমালোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ সংক্রান্ত লেখালেখি হতে থাকে। বিয়ে না পড়িয়ে সুরমা ও তাওজনের এক বাড়িতে থাকা নিয়ে কটু কথা বলতে থাকেন অনেকে। বাড়িতে আসা লোকজন সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পরিবারের সদস্যদের।

 

গত ২ নভেম্বর সুরমা আক্তারের সঙ্গে চীনা যুবক ওয়াং তাওজেন বিয়ে হওয়ার কধা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় সেটি হয়ে উঠেনি। পরের দিন সোমবারও বিয়ে সম্ভব হয়নি। আইনি জটিলতায় তাদের বিয়ে আটকে যায়। এরই মধ্য তাওজেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। আদালতে বিয়ে পড়াতে এসে আইনজীবীরা চীনা দূতাবাসের পরামর্শ নিতে বলেন। চীনা দূতাবাসে যাওয়ার পর সেখান থেকে পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। তবে সেখান থেকেও বিয়ের আইন বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখা পাওয়া যায়নি।

 

আরও পড়ুন: লাশ দাফন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, আসবাবপত্র নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন অনেকে

 

এ ব্যাপারে সুরমার বিমাতা (সৎ মা) নুরেনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, তার মেয়ের ভালবাসা পেতে চীনের যুবক চলে আসেন। কিন্তু দেশে আসার পর একেকজন একেক কথা বলতে থাকেন। এর মধ্যে চীনা দূতাবাস এ ধরণের বিয়ের বিষয়ে সতর্কতা জারি করায় সমস্যা দেখা দেয়।

 

সুরমার চাচা মো. বাহার আলী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে ও আদালতে গিয়ে বিয়ে পড়াতে ব্যর্থ হই। আইনি জটিলতা থাকায় চীনা দূতাবাসে যাই। সেখান থেকে জানানো হয় ওই দেশের সরকার এ বিষয়ে বার্তা দিয়ে রেখেছে। তারা আইন মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখান থেকে বলা হয় এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই।

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তাওজেনকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি। তাকে বলেছি তাদের দেশ থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে। সেও আশ্বস্থ করেছে আইনি প্রক্রিয়া ঠিকঠাক মতো হলেই সুরমাকে বিয়ে করবেন। আপাতত তিনি চীনে চলে যাবেন। আমরাও চাই, আর কোনো ধরণের সমালোচনা যেন না হয়। চীন থেকে অনুমতি পেলে আবার এসে বিয়ে করবেন।

 

উল্লেখ্য, এক সতর্কবার্তায় চীনা নাগরিকদেরকে বিদেশি নারীকে বিয়ের ক্ষেত্রে নিজ দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধ ম্যাচমেকিং এজেন্টদের এড়িয়ে চলতে এবং শর্ট ভিডিও প্লাটফর্মে প্রকাশিত আন্তসীমান্ত ডেটিং বিষয়ক বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরপর ৩টি গুলিতে লুটিয়ে পড়েন বিএনপি নেতা, পাঠানো হলো ঢাকায়
 

দূতাবাস আরো বলেছে, ‘বিদেশি স্ত্রী কেনা’র মতো ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। বাংলাদেশে বিয়ে করার আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

এছাড়া জানা গেছে, চীনে নারী-পুরুষ অনুপাতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হওয়ায় অনেক পুরুষ অন্য দেশ থেকে স্ত্রী আনার পরিকল্পনা করছেন। আর এই সুযোগে কিছু এজেন্সি টাকার বিনিময়ে স্ত্রীর সন্ধ্যান দেয়ার নামে মানবপাচারে জড়িয়ে পড়ছে।

 

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন