শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তিনদিনেও চোর শনাক্ত করাও যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনাস্থলে রাতে কোনো প্রহরী দায়িত্বে ছিলেন না।
বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম জানান, ডিউটিরত দুইজন কর্মী বুধবার বিকাল ৫টার পর দায়িত্বস্থল ছেড়ে চলে যান। রাতে খামারটি সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিল। সকালে নিরাপত্তাকর্মী গিয়ে দেখেন দরজার তালা ভাঙা এবং ভেড়াগুলো নেই। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ঘটনাটি নিয়ে থানায় জিডি করা হবে।
আরও পড়ুন: আবারও বহিরাগতের হামলার শিকার নারীসহ বাকৃবির ২ শিক্ষার্থী
গবেষণায় যুক্ত সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারি বলেন, এটি খুবই প্যাথেটিক, আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। অনেক সাধনা করে এই ‘নিউক্লিয়ার স্লট’তৈরি করেছি। এর জন্যই আমি গোল্ড মেডেল পেয়েছি। চর ও হাওর অঞ্চলে এই জাতের ভেড়ার পরিচিতি রয়েছে। বর্তমানে তিনটি প্রজনন প্রকল্প ও দুটি গবেষণা প্রকল্প চলমান ছিল। দরপার ও গাড়ল প্রজাতির উন্নত ভেড়া—একেকটির ওজন ৩০-৪০ কেজি। তালা ভেঙে ১৪টি ভেড়া নিয়ে গেছে, এখন মাত্র ২-৩টি অবশিষ্ট আছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেমন বড় ক্ষতি, ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্যও অত্যন্ত কষ্টের।
তিনি আরও জানান, ২০১১ সাল থেকে এসব ভেড়া নিয়ে গবেষণা চলছে। এ ভেড়াগুলো থেকে সিমেন কালেকশন করে শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিতেন। চুরির কারণে শুধু তার ব্যক্তিগত গবেষণা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষ থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণারও মারাত্মক ক্ষতি হলো। এর আগে এক ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রায় ২২টি ভেড়া মারা গিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নিরাপত্তা কাউন্সিলের পরিচালক অধ্যাপক ড মো আরিফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করি এবং দায়িদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেই। এরইমধ্যে ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অধ্যাপক ফরিদা বারিকে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং পুলিশি সহায়তায় দ্রুত ভেড়াগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: কেন ক্ষমা চাইব? আমি তো কোনো অন্যায় করিনি: বাকৃবি উপাচার্য
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারি ভেড়ার উপর গবেষণার জন্য বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস (বিএএস) গোল্ড মেডেল অর্জন করেছিলেন। মাল্টিপল ওভুলেশন অ্যান্ড এমব্রায়ো ট্রান্সফার বিষয়ে তার এ গবেষণাকর্ম বিশেষভাবে স্বীকৃতি পায়। অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন বারি ২০১১ সাল থেকে ভেড়ার ভ্রূণ ও ভ্রূণ স্থানান্তর নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। দেশে প্রথমবারের মতো তিনি ভ্রূণ স্থানান্তরের মাধ্যমে ভেড়ার বাচ্চা উৎপাদন করেন। সুপার ওভুলেশনের মাধ্যমে বছরে ২৫-৩০টি উন্নত প্রজাতির কাঙ্ক্ষিত ভ্রূণ উৎপাদনে সক্ষম হন তিনি। এসব গবেষণা আমিষের চাহিদা পূরণ এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখছে।
]]>