বিমানবন্দরে লাগা আগুনে পুড়লো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম

৪ সপ্তাহ আগে
রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ (পণ্য রাখার স্থান) কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা বেশ কিছু বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে গেছে।

রোববার (১৯ অক্টোবর) বন্দর সূত্রে জানা যায়, এসব সরঞ্জাম আজই কার্গো ভিলেজ থেকে খালাস হওয়ার কথা ছিল।

 

শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবি কাজ করে। সাত ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরমধ্যে সেখানে থাকা পণ্য পুড়ে যায়। কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লেগেছিল সেখানে আমদানি করা পণ্য রাখা হতো।

 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়া থেকে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এনে সেখানে রাখা হয়েছিল। বিমানবন্দরে আমদানি পণ্য খালাসে সিঅ্যান্ডএফের কাজ করে মমতা ট্রেডিং কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

 

মমতা ট্রেডিংয়ের কাস্টমসের কর্মকর্তা সরকার বিপ্লব হোসাইন জানান, ছয় দিন আগে রাশিয়া থেকে সাতটি শিপমেন্টের মাধ্যমে প্রায় ১৮ টনের মতো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আনা হয়। এসব পণ্য খালাসের জন্য পরমাণু শক্তি কমিশন থেকে এনওসি (অনাপত্তিপত্র) নিতে হয়। সেই এনওসি নিতে দেরি হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পণ্য খালাস করা যায়নি। আজ খালাস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারমধ্যেই এসব পণ্য পুড়ে গেছে।

 

আরও পড়ুন: একের পর এক আগুন: পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে বিদেশে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের চেষ্টা নয় তো?

 

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা নাও হতে পারে। কারণ, কার্গো সেকশনটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এখানে কাস্টমসের জব্দ পণ্য, আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের দলিলপত্র, ওষুধশিল্প ও কৃষিপণ্যের কাঁচামাল সংরক্ষিত থাকে।
 

 

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএইএবি) সভাপতি কবির আহমেদ সময় সংবাদকে জানিয়েছেন, বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এয়ার এক্সপ্রেস ইউনিট পুরোপুরি পুড়ে গেছে।

 

দেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ’স্কাইবাই বিডির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাসেল বিন আহাদ বলেন, বিমানবন্দর কার্গো শেডে আগুনে স্কাইবাই বিডির দুই কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এটি শুধু প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, হাজার হাজার গ্রাহকের জন্যও ক্ষতি।


 

 সময় সংবাদ

 

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘কার্গো ভিলেজের ভেতরের লোক ও বাইরের চক্র মেলবন্ধনে এই ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সেখানে অনেক পণ্য চুরি হয় এবং ধামাচাপা দেয়ার জন্যই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে কিনা, সেটি তদন্ত করা প্রয়োজন। এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাজ করা সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানসহ প্রত্যেককেই দায়িত্ব নিতে হবে। পানির পাইপ নষ্ট, ফায়ার ফাইটিং কার্যকর নয়-এভাবে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে?’

 

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর টিআইএম নুরুল কবির বলেন, ‘শাহজালাল বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমদানি-রফতানিতে বড় প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিকভাবে ফায়ার সেফটির অব্যবস্থাপনা দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’

 

বিকেএমইএ ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 

গত কয়েকদিনে স্থানীয় ও রফতানিমুখী একাধিক পোশাক কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা আমাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতি বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। কারণ কার্গো ভিলেজের মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যে এটি কতটা অনিরাপদ।
 

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন