চলতি মাসেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সফর করবে জাতীয় দল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ২টি টি-টোয়েন্টি খেলে পাকিস্তানে যাবে টাইগাররা। সেখানে খেলবে এফটিপি নির্ধারিত ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই দুই সিরিজ সামনে রেখে গতকাল (৪ মে) ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বিসিবির নির্বাচকরা। লিটন দাসকে অধিনায়ক করে ঘোষিত দল নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বাধীন নির্বাচক প্যানেল।
নির্বাচক প্যানেল দল নির্বাচনে সবশেষ বিপিএলের পারফরম্যান্সকে বলা যায় পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে। সবচেয়ে বড় চমক হয়ে এসেছে আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের না থাকাটা। জায়গা হয়নি গত আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মোহাম্মদ নাঈম শেখেরও। তবে মিরাজ-নাঈম না থাকলেও বিপিএলে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়া সাবেক টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ঠিকই জায়গা পেয়েছেন দলে।
টেস্ট ও ওয়ানডের নিয়মিত পারফর্মার হলেও টি-টোয়েন্টিতে খুব একটা উজ্জ্বল নন মেহেদী হাসান মিরাজ। সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তাকে দলে বিবেচনা করা হয়নি। তবে সবশেষ বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। ব্যাটে বলে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন তিনিই। সাকিব আল হাসানের বিদায়ে তৈরি হওয়া শূন্যতায় মিরাজ এবার জাতীয় দলে বিবেচিত হবেন বলেই ধারনা ছিল সবার। কিন্তু বিপিএলের পারফরম্যান্সকে উপেক্ষা করে তাকে দুই সিরিজের একটির জন্যও বিবেচনা করা হয়নি।
আরও পড়ুন: শান্ত থাকলেও নেই মিরাজ, যে ব্যাখ্যা দিলেন প্রধান নির্বাচক
গত আসরে ১৪ ম্যাচে ব্যাট হাতে ২৭.০৮ গড়ে ৩৫৫ রান করেছেন মিরাজ। স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩২.৯৬। আসরের অষ্টম সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়েছিলেন তিনি। আর বল হাতে ২৯.০৮ গড়ে ১৩ উইকেট শিকার করেছেন ওভারপ্রতি ৭.৭১ রান দিয়ে। এমন ঝলমলে পারফরম্যান্সের পর এই অলরাউন্ডারকে দলে না নেয়ার কারণ হিসেবে টিম কম্বিনেশনকেই দুষছেন প্রধান নির্বাচক লিপু।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, (টি-টোয়েন্টিতে) এখানে ৫টা বোলার যারা থাকে তাদের ৪ ওভার বল করতেই হবে। এখানে শেখ মেহেদী (হাসান) একটু এগিয়ে আছে। আমাদের হাতে যদি সুযোগ থাকত নাহিদ রানা অন টাইম আছে তাহলে হয়ত পেসার কমিয়ে ব্যাটার বাড়াতে পারতাম। লিটন (দাস) যদি ৩ হয়, মিডলে (তাওহিদ) হৃদয়, শামীম (হোসেন পাটোয়ারী), (জাকের আলী) অনিক আছে পাশাপাশি (নাজমুল হোসেন) শান্তও আছে। আরেকটা নাম এড করার সুযোগ ছিল না। থাকলে আমি তাকে নিতে চাইতাম। আমি মনে করি মিরাজ আমাদের টি-টোয়েন্টি প্ল্যানিংয়ে একটু ব্যাকফুটে আছেন।'
গত বিপিএলে আলো ছড়িয়েছেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে করছিলেন পাঁচশর বেশি রান। ১৪ ম্যাচে ৪২.৫৮ গড়ে করেছেন ৫১১ রান। স্ট্রাইক রেটও আশা জাগানিয়া–১৪৩.৯৪। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩টি অর্ধশতকও হাঁকিয়েছেন তিনি। এরপর সদ্যসমাপ্ত ডিপিএলেও হেসেছে তার ব্যাট। ১১ ম্যাচে করেছেন ৬১৮ রান। এরপরেও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সিরিজের জন্য বিবেচিত হননি তিনি। তাকে নেয়া হয়েছে নিউজিল্যান্ড 'এ' দলের বিপক্ষে সাদা বলের সিরিজের দলে।
গত বিপিএলের অন্যতম প্রাপ্তি ছিল উইকেটকিপার মাহিদুল হাসান অঙ্কনের হার্ড হিটিং। আসরে খুলনা টাইগার্সের হয়ে ১২ ইনিংসে ৩৫.১১ গড়ে ৩১৬ রান করেছেন তিনি। তবে অঙ্কন আলোচনায় ছিলেন তার বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের জন্য। ১৭৪.৫৯ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন তিনি। তবে তাকেও বিবেচনা করা হয়নি। তাকেও রাখা হয়েছে 'এ' দলে।
নাঈম শেখ ও অঙ্কনকে টি-টোয়েন্টি দলে না রাখার ব্যাখ্যা দিয়ে লিপু বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল কিন্তু নেহায়েত কম শক্তিশালী নয়। এখানে যদি সাদা বলে সুযোগ পায় তাহলে মেধার প্রকাশ ঘটানো যায় টি-টোয়েন্টির চাইতে বেশি। লাল বলেও সে ভালো করেছে। একই ব্যাপার অঙ্কনের ক্ষেত্রেও। তাদের ম্যাচুরিটি কীভাবে গ্রো করা যায়, আন্তর্জাতিকে যাওয়ার আগে নিজেদের শাণিত করার সুযোগ। সামনে আরও ম্যাচ আছে, সুযোগ আসবে ইনশাআল্লাহ।’
আরও পড়ুন: কোনো ফরম্যাটেই কি অধিনায়ক থাকছেন না শান্ত?
বিপিএলের পারফরম্যান্সের যে কোনো গুরুত্ব নির্বাচকদের কাছে নেই তার বড় প্রমাণ নাজমুল হোসেন শান্ত। টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়া শান্ত ইনজুরির কারণে গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ছিলেন না। এরপর বিপিএলে বাজে পারফরম্যান্সের জন্য ফরচুন বরিশালের একাদশেও জায়গা হারিয়েছিলেন তিনি। কোনো পারফরম্যান্স ছাড়াই টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে নির্বাচকরা আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে। লিপু এ ব্যাপারে বলেন, ‘শান্ত আমাদের সাবেক অধিনায়ক ছিলেন। আপনি দলটার দিকে তাকিয়ে দেখুন। আপনার অভিজ্ঞতাও দরকার। ওপরে আমাদের সৌম্য আছেন। ৯০-এর কাছাকাছি ম্যাচ খেলেছেন। লিটন দাসও আছেন। এরপর আপনি তাকান, তাহলে দেখবেন যে বিস্তর ফারাক হয়েছে। শান্তর পঞ্চাশ হয়নি, ৪০-এর আশেপাশে ম্যাচ। তাই কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড় দলের সঙ্গে আপনার নিতে হবে।’
দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এনামুল হক বিজয়, নাঈম শেখরা নিয়মিত রানের বন্যা বইয়ে দিলেও জাতীয় দলে তাদের বিবেচনা করা হয় না সেভাবে। আবার কালেভদ্রে সুযোগ পেলেও সেটি তারা কাজে লাগাতে ব্যর্থ। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সকে জাতীয় দলের হয়ে অনুদিত করতে না পারার কারণে নিয়মিতই প্রশ্ন উঠতে টুর্নামেন্টের মান নিয়ে। বিপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগকেও হয়ত বিসিবি একই পাল্লায় মাপছে। তবে একই টুর্নামেন্টে পারফর্ম করেই পাকিস্তান জাতীয় দলে ফিরেছেন খুশদিল শাহ, ফাহিম আশরাফরা। আকিফ জাভেদের মতো পেসারও নজর কেড়েছেন। শুধু উপেক্ষিত থাকছেন দেশীয় ক্রিকেটাররাই।