লাইটিং না থাকায় এরই মধ্যে ঘটেছে দুটি সড়ক দুর্ঘটনা। ঘটেছে একাধিক চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল না হওয়ায় ও চোর চক্রকে সনাক্ত করতে না পারায় পরপর এসব ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ‘মওলানা ভাসানী সেতুটি উদ্বোধনের একদিন পরেই ২১ আগস্ট ৬টি ল্যামপোস্টের দু-পাশের ৩১০ মিটার বিদ্যুতের ক্যাবেল চুরি হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ২৪ আগস্ট সেতুর ২ শতাধিকের বেশি রিফ্লেক্টর লাইট চুরির ঘটনা ঘটেছে। উদ্বোধনের পর থেকে ধারাবাহিক এসব ঘটনায় দুই জেলার মানুষের মধ্যে চলছে মিশ্র আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
আরও পড়ুন: তারের পর মওলানা ভাসানী সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট চুরি
স্থানীয়রা জানান, সেতু উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহন এ সেতু দিয়ে চলাচল করছে। বহুল প্রত্যাশিত সেতুটি দেখতে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছেন এখানে। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে দুই পাড়ের কয়েক কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ পুরো সেতুটি। এতে ৪ দিনের ব্যবধানে সেতুতে ঘটেছে দুটি দুঘটনা। এতে মারা গেছেন ১ জন আহত হয়েছেন আরও ২জন। পাশাপাশি ঘটছে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। এতে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন সেতুতে চলাচলকারী ও দর্শনার্থীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ৯২৫ কোটি টাকা ব্যায়ে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘ এই সেতু ও সড়ক পারাপারে রাখা হয়নি ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ধারাবাহিক এসব চুরির ঘটনা ঘটলেও চক্রটিকে শনাক্ত করতে না পারায় বাড়ছে এসব ঘটনা। সাথে লাইটিং সচল না হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় চলাচল করতে হচ্ছে সেতু পারাপারকারীদের।
সেতুর গাইবান্ধা প্রান্তের হরিপুরের বাসিন্দা ওবায়েদুল ইসলাম জানান, সেতু চালু হওয়া তারা আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। কিন্তু পরপর এসব চুরির ঘটনায় তারা আশাহত হয়ে পড়েছেন। সেতু ও চলাচলকারীদের নিরাপত্তায় সেতুর দুই প্রান্তে ২টি পুলিশ বক্স স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সেতুতে কোনো যানবাহন বা মানুষ যাতে না দাঁড়াতে পাড়ে সে দিকেও প্রশাসনকে নজর দিতে হবে।
সেতুর অপর প্রান্তের কুড়িগ্রামের চিলমারীর বাসিন্দা মানিক মিয়া ক্ষোভ নিয়ে অভিযোগ করেন, তার চুরির ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও চোরকে ধরতে পারেনি পুলিশ। সন্ধ্যার পর অন্ধকারে মানুষ নিরাপত্তহীনতার মধ্যে দিয়ে আসা যাওয়া করছে। এরপর আবার লাইট চুরি। প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও উদাসীনতায় এসব ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ও লাইটিং ব্যবস্থা দ্রুত সচল প্রয়োজন।
বিদ্যুতের ক্যাবেল চুরি এরপর রিফ্লেক্টর লাইট চুরিসহ উদ্ধোধনের পর থেকে এসব ঘটনায় বিব্রত জানিয়ে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর আশ্বাস দেন।
তিনি জানান, এসব ঘটনায় সেতুতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপ্রতিকর এসব ঘটনা বন্ধে স্থানীয় জনগনের নজরদারি বাড়ানোসহ সহায়তা প্রয়োজন ।
আরও পড়ুন: ভাসানী সেতুর তার চুরির ঘটনায় মামলা
দীর্ঘ ৫ বছরের নির্মাণ কাজ শেষে গত ২০ আগষ্ট উদ্ধোধন করা হয় গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত দুই জেলার সরাসরি সড়কের পথের স্বপ্নের ‘মওলানা ভাসানী সেতু। সেতুটির উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা।
]]>