বিদেশে বসে যুবদল নেতা কিবরিয়াকে হত্যার নির্দেশ দেন মামুন

১ সপ্তাহে আগে
ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে (৪৭) গুলি করে হত্যার ঘটনায় ওই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ওরফে মামুন নামের পলাতক এক আসামির নাম সামনে চলে এসেছে। যিনি মালয়েশিয়া থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে কিবরিয়াকে হত্যা করিয়েছেন।

গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে হেলমেট ও মুখোশ পরা তিন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মিরপুর ১২ নম্বরের বি ব্লকে ‘বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি’ নামের একটি দোকানে ঢুকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব কিবরিয়াকে হত্যা করে।

 

এ ঘটনার পর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ওঠে এবং দ্রুত না চালানোয় চালক আরিফ হোসেনের (১৮) কোমরে গুলি করে।  আহত অবস্থায় চালককে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। আর রক্তাক্ত অবস্থায় কিবরিয়াকে শেরেবাংলা নগরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা জনি ভূঁইয়া (২৫) নামের একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

 

আরও পড়ুন: কিবরিয়ার শরীরে ১৮ ক্ষতচিহ্ন, কিলিং মিশনে ছিলেন যারা


হত্যাকাণ্ডে ঘটনায় কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার ওরফে দীনা বাদী হয়ে মঙ্গলবার পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় আসামি হিসেবে জনিসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অপর আসামিরা হলেন সোহেল ওরফে পাতা সোহেল ওরফে মনির হোসেন (৩০), সোহাগ ওরফে কালু (২৭), মাসুম ওরফে ভাগিনা মাসুম (২৮) ও রোকন (৩০)। এ ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় আরও সাত-আটজন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পল্লবী থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে।


দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, কিবরিয়া দোকানে ঢোকার দু–তিন সেকেন্ডের মধ্যে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ভেতরে ঢুকে তাকে গুলি করতে শুরু করে। দুর্বৃত্তদের একজনের পরনে পাঞ্জাবি ও দুজনের গায়ে শার্ট ছিল। প্রত্যেকের মাথায় হেলমেট ও মুখে মুখোশ ছিল। এ সময় দোকানে ৯ জন ছিলেন। দুর্বৃত্তদের একজন কিবরিয়াকে গুলি করতে শুরু করলে ভয়ে দোকানে থাকা লোকজন বেরিয়ে যান। কিবরিয়াকে দুজন গুলি করে। এ সময় কিবরিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাদের একজন আরও তিনটি গুলি করে দ্রুত বেরিয়ে যান।
পুলিশ বলছে, কিবরিয়াকে হত্যা করতে জনি ভূঁইয়াসহ কয়েকজনকে ভাড়া করা হয়েছিল। হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া অপর দুজনকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

 

আরও পড়ুন: নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই কিবরিয়াকে হত্যা: মোনায়েম মুন্না


মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পল্লবী এলাকার শীর্ষসন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ওরফে মামুন মালয়েশিয়ায় এবং তার ভাই মশিউর ওরফে মশি ভারতে পালিয়ে আছেন। মামুনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুন, মাদক, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও ডাকাতির অভিযোগে পল্লবী থানায় ২৭টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ১৫টি গ্রেফতারি পরোয়ানা ও ২টি সাজা পরোয়ানার তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মামুনকে ২০২১ সালে পল্লবী থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতে বসে মিরপুরের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছিলেন মামুন। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে মামুন মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান বলে পুলিশ জানায়।


সম্প্রতি মামুন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ তাদের লোকদের পাইয়ে দিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু কিবরিয়া তাতে রাজি হননি। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে মামুন লোক ভাড়া করে কিবরিয়াকে হত্যা করিয়েছেন বলে তারা ধারণা করছেন। 


এ বিষয়ে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, আটক জনি ভূঁইয়া যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, কিবরিয়াকে হত্যা করার জন্য তাকেসহ কয়েকজনকে ভাড়া করা হয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: মাস্ক-হেলমেট পরে যেভাবে ৩ জন গুলি করে যুবদল নেতাকে


মঙ্গলবার দুপুরে নিহত কিবরিয়ার মরদেহ মিরপুরের নিজ বাসায় নেয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও এলাকাবাসী। কেউই মানতে পারছেন না নির্মম এ হত্যা। মরদেহ দেখতে ছুটে আসেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আহ্বান জানান তিনি।


এর আগে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাশাত জাবিনের করা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিবরিয়ার শরীরে ১৮টি ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলিতেই তার মৃত্যু হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন