‘বিদেশে থাকা’ সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে থানা ভাঙচুরের মামলা দিলো ভাঙ্গা পুলিশ!

৩ সপ্তাহ আগে
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় থানা ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজাদুজ্জামান।

এ মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামি ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী। যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা। এছাড়াও মামলার ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন মিয়াকে।


এদিকে মামলার ১৮ নম্বর আসামি করা হয় সাবেক মেয়র আবু ফয়েজ মো. রেজাকে। তার বাড়ি উপজেলার নূরপুর গ্রামে। মামলার আসামিরা হামলা-ভাঙচুরে অংশ নেন বলে এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের স্পিডবোট মহড়া

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবু ফয়েজের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। সেখানে তার স্ত্রী ও দুই ছেলে থাকেন। তিনি ২০০২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা চারবার ভাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ছিলেন। মেয়র থাকাকালে প্রতিবছরই একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রে যেতেন।
 

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেও পুলিশের করা থানা ভাঙচুর মামলার আসামি হয়েছেন ভাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু ফয়েজ মো. রেজা। তিনি ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতিও। ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত সোমবার দুপুরে ভাঙ্গা থানায় হামলা করে ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
 

ভাঙ্গা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের সময় তৎকালীন মেয়র আবু ফয়েজ যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। এর সপ্তাহখানেক পর তিনি দেশে আসেন। গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর তিনি (মেয়র) পৌরসভায়ও কাজ করেন। ১৮ আগস্ট পর্যন্ত তিনি মেয়র হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর দেড় মাস ভাঙ্গায় ছিলেন। ওই বছরের অক্টোবর মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি।
 

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ভাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু ফয়েজ মো. রেজা বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
 

পুলিশ বলছে, থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তত ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর আগে দ্রুত বিচার আইনে করা আরেক মামলায় আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের গেজেটে ফরিদপুর-৪ আসনের দুটি ইউনিয়ন (আলগী ও হামিরদী) কেটে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।


এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্থানীয় জনতা ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। ইউএনওর আশ্বাসে আন্দোলন তিন দিনের জন্য স্থগিত হয়। পরে ৯ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর এবং ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
 

গত রোববার মহাসড়কের পাশাপাশি রেলপথও অবরোধ করা হয়। এতে ভাঙ্গার হামিরদী ও ভাঙ্গা জংশন এবং রাজবাড়ীতে তিনটি ট্রেন আটকা পড়ে, ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
 

রোববার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। একই দিন আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১শ ৫০ জনকে  দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়। সেই মামলায় আলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিককে গ্রেফতার দেখানো হয়।

আরও পড়ুন: নিক্সন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ভাঙ্গা থানা ভাঙচুরের মামলা

সোমবার তৃতীয় দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ভাঙ্গা থানা, উপজেলা কমপ্লেক্স, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা ও সরকারি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়।
 

আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল, তারা ভাঙচুর করতে চাননি। তবে আলগী, হামিরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীকে জড়িয়ে দ্রুত বিচার আইনে যে মামলা হয়েছে, তা এলাকাবাসী মেনে নিতে পারেননি। শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলন চলছিল। ভাঙচুর এবং হামলার ঘটনায় তৃতীয় পক্ষ জড়িত।’
 

পরবর্তীতে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে পরিপ্রেক্ষিতে আগামী রোববার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা। এ সময়ের মধ্যে দুইটি ইউনিয়ন ফরিদপুর-৪ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে পুনরায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা।
 

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা জানান, ভাঙ্গা উপজেলা কমপ্লেক্সে সহিংস ঘটনার বিষয়েও মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন