বিদেশ থেকে লাশ হয়ে ফিরছেন প্রিয়জন, অজানা থাকছে মৃত্যুর কারণ!

২ দিন আগে
বিদেশে কাজ করতে যাওয়া অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী দেশে ফিরছেন কফিনবন্দি হয়ে। অথচ তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনেক সময়ই অজানা থেকে যাচ্ছে পরিবারের কাছে।

এই উদ্বেগজনক বাস্তবতা সামনে এসেছে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘লাশ হয়ে ফিরে আসা অভিবাসী কর্মীর সম্মান ও মর্যাদা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে।


সংলাপে উঠে আসে, বলরামের মা লেবানন থেকে এবং নূর মোহাম্মদের বোন জর্ডান থেকে লাশ হয়ে ফিরলেও তাদের পরিবার আজও জানে না মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। গন্তব্য দেশের মেডিকেল সার্টিফিকেটে আত্মহত্যা বলা হলেও, পরিবার তা মেনে নিতে পারছে না।


রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর তাসনিম সিদ্দিকী জানান, ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪৮ শতাংশ পরিবার মৃত্যুর সরকারি কারণ নিয়ে সন্দিহান। অনেক সময় মরদেহে ক্ষতের চিহ্ন, পরিবারের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের কথোপকথনের তথ্য এবং বিদেশে নির্যাতনের অভিযোগ এসব সন্দেহের পেছনে ভূমিকা রাখে।


প্রফেসর সিদ্দিকী আরও জানান, ২০২৪ সালে ৪ হাজার ৮১৩ জন বাংলাদেশি অভিবাসীর মরদেহ দেশে ফেরত আসে, যার মধ্যে ৯৪.৪ শতাংশ ছিলেন পুরুষ এবং ৩.৬ শতাংশ নারী। তাদের মধ্যে ৩১ শতাংশের মৃত্যু হয় দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা বা হত্যাকাণ্ডের কারণে।


অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সচিব সেবাস্টিন রেমা বলেন, ‘অভিবাসীদের মৃত্যু গভীরভাবে বেদনাদায়ক। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রোটোকল ও বহুপাক্ষিক ফোরামে বিষয়টি তুলতে হবে।’


আরও পড়ুন: মেগা অভিযান: মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৫৯৭ অভিবাসী আটক


প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা মৃত অভিবাসীদের মরদেহ সঠিক মর্যাদায় ফেরত আনার ব্যবস্থা জোরদার করতে পারি।’


তিনি আরও বলেন, ‘এই ছোটো ছোটো পদক্ষেপগুলোই একদিন বড় পরিবর্তনের স্ফুলিঙ্গ হয়ে উঠবে।’


সাবেক সচিব সেলিম রেজা জানান, এখন বিদেশ থেকে মরদেহ আনার দীর্ঘসূত্রিতা অনেকটাই কমেছে। তবে আরও সচেতনতা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে।


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এটিএম আব্দুর রউফ মন্ডল জানান, এখন থেকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে মরদেহ ফেরত আনা সম্ভব না হলে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব বাজেট ব্যবহার করেই তা করা যাবে। এরইমধ্যে বিদেশে অবস্থিত মিশনগুলোকে এই নির্দেশনা দিতে একটি সার্কুলার প্রস্তুত করা হয়েছে।


তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের রামরু গবেষণার ভিত্তিতে মরদেহ গ্রহণ ও পরিবারের বসার জন্য নির্ধারিত স্থান তৈরি করা হয়েছে। ফলে হয়রানি অনেকটা কমেছে।’


আরও পড়ুন: কুয়ালালামপুরে পাঁচ মাসে বাংলাদেশিসহ আটক ১ হাজার ৭৮৯ জন


সংলাপে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ থাকলে দেশে পুনরায় ময়নাতদন্ত করা সম্ভব।’


তিনি একটি ঘটনার উল্লেখ করে জানান, মরদেহে কাটা দাগ দেখে পরবর্তীতে জানা যায়, মৃত ব্যক্তির কিডনি অপসারণ করা হয়েছিল।


এই সংলাপে আরও অংশগ্রহণ করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক মুহাম্মদ ইকরাম উল্লাহ, বায়রার আলী হায়দার চৌধুরী, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সারোওয়াত মেহজাবিনসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।


সংলাপটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও রামরুর যৌথ উদ্যোগে এবং হেলভেটাস বাংলাদেশ ও সুইস দূতাবাসের সহায়তায় বাস্তবায়িত সিমস প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন