বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক। ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর দিনে সংবাদ সম্মেলনেও এসেছেন নিজেই।
শততম টেস্ট ম্যাচ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে মুশফিক বলেন, 'এটা তো আমি নিজেও আসলে বিশ্বাস করতে পারি না যে বাংলাদেশের খেলোয়াড় হয়ে কেউ ১০০ টেস্ট খেলবে। এটা অনেক বড় অর্জন। এটা শুধু আমি করেছি এজন্য না যেকোনো ক্রিকেটার বা তার দেশের জন্যই অনেক গর্বের মুহূর্ত। ভালো লাগছে যে ব্যক্তিটা আমি হতে পেরেছি। এ কারণে আমার দায়িত্বটাও একটু বেশি। চেষ্টা করব যে কয়টা ম্যাচ এভাবে খেলতে পারি। আর ড্রেসিংরুমেও সেরকম পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করব যেন আমি যাওয়ার পর দুই-একটা খেলোয়াড় তৈরি থাকে যেন অভাবটা পূরণ হয়।'
গতকাল ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছিলেন মুশফিক। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত শতক নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা দেখা যায় ক্রিকেটারদের মধ্যে। আর শততম টেস্টে মাইলফলক গড়ার বিষয়টি তো আছেই। কিন্তু মুশফিক জানিয়েছেন, অভিজ্ঞতার কারণে খুব একটা অনুভব করেননি তিনি।
তিনি বলেন, '১০০ টেস্ট তো অনেক সময়, এই সময়ে এগুলো সবকিছু শিখে গেছি। সেট হওয়ার চেষ্টা করেছি এবং মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করেছি। ক্যারিয়ারের প্রতিদিন আমি চেষ্টা করি যে কিভাবে ইমপ্রুভ করা যায় এবং এটাই আমার ক্যারিয়ারের সবচাইতে বড় হাইলাইট পয়েন্ট।'
শততম টেস্টের আগে দলের উদ্দেশ্যে নিজের বার্তা কী ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে মুশফিক বলেন, 'প্রত্যেকটা ম্যাচেই চেষ্টা থাকে আমি যেন সেরাটা দিতে পারি এবং দলের জয়ে আমার অবদান যেন থাকে। গতকালকে ম্যাচের শুরুতে হার্ডলে একটা কথা বলেছি, ১০০ ম্যাচ বা যেকোনো মাইলফলক হোক সেটা সবসময় একটা অর্জন। আমার কাছে নিজের নামটা আলাদা মনে হয়। সবসময়ই বাংলাদেশ দল আমার কাছে এগিয়ে। দলের মধ্যে এই বার্তাটা দেয়ার চেষ্টা করেছি (শততম ম্যাচের আগে) যে আমার জন্য না, দেশের জন্য যেন আমরা খেলি এবং এই ম্যাচে জয়টাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার হবে। আলহামদুলিল্লাহ ভালো লেগেছে যে ম্যাচে অবদান রাখতে পেরেছি।'
আরও পড়ুন: হামজার অভিনন্দন বার্তায় বিস্মিত মুশফিক, দেখা হলে দিতে চান ‘ধন্যবাদ’
এদিকে নিজের শততম টেস্ট সেঞ্চুরি নিজের প্রয়াত দাদা-দাদী এবং নানা-নানিকে উৎসর্গ করেছেন মুশফিক। আবেগাপ্লুত মুশফিক বলেন, ‘তারা যখন বেঁচে ছিলেন, আমার সবচেয়ে বড় ভক্ত ছিলেন। মারা যাওয়ার আগে তারা যখন অসুস্থ ছিলেন... আমার এখনও মনে আছে তারা বলেছিলেন, ভাই তোমার খেলা দেখার জন্য হলেও আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই। খুব কম নাতি-নাতনিদের ভাগ্যে এমনটা জোটে। তাদের দোয়াতেই আমি আজকে এই পর্যায়ে। আরও অনেক মানুষের অবদান আছে। তবে বিশেষ এই অর্জন তাদেরকেই উৎসর্গ করতে চাই।’
বিশেষ উপলক্ষে স্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এই তারকা। জানিয়েছেন, ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছেন স্ত্রীর কাছ থেকেই। তিনি বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি সমর্থন স্ত্রী দিয়েছে। আমি অন্য সবার চেয়ে বেশি অনুশীলন করি। এটা সম্ভব হতো না, যদি ঘরে ওইরকম পরিবেশ না থাকত। আমরা যৌথ পরিবারে থাকি, সেখানে সবার অনেকরকম প্রত্যাশা থাকে, সেগুলো পূরণ করা, আমার পর্যন্ত না এসে যত সম্ভব সব ধরনের সমস্যা সমাধান করা....আমার মনে হয় এটা সবচেয়ে বড় ত্যাগ।’
‘আমার দুটো বাচ্চা আছে। বাচ্চারা রাতে ঘুমায় না, তবে আমার কখনো একদিনও নির্ঘুম রাত কাটেনি। পুরোটা সময় সে-ই রাত জেগে বাচ্চাদের সামলেছে। আমাকে চিন্তা থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছে। আমি তার কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। হয়তোবা কখনও এভাবে তার সামনেও বলা হয় না, এটা নিয়েও অভিযোগ আছে। তবে আমি সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ এই বিষয়টাতে। বিয়ের ১১ বছরের মতো হয়ে গেছে...২০১৪ সালের পর আমার ক্রিকেটের ইমপ্যাক্ট যদি খেয়াল করেন, তবে এটা একটা বড় বিষয়। আমি সত্যিই তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের শততম টেস্ট ম্যাচে ১০৬ রান করেছেন মুশফিক। শতকের ৯৯ রান গতকালই করে ফেলেছিলেন। আজ বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি মুশফিকের ১৩তম সেঞ্চুরি। আর এই সেঞ্চুরিতে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকানো ব্যাটারদের তালিকায় জায়গা করেছেন তারকা ক্রিকেটার। মুশফিকের আগে এমন কীর্তি গড়েছেন আরও ১০ জন। রিকি পন্টি, জো রুটদের মতো গ্রেট ক্রিকেটাররা আছেন সেই তালিকায়।
]]>
৩ দিন আগে
১






Bengali (BD) ·
English (US) ·