মুসা আ. র জাতি বনী ইসরাইল দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। তাদেরকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখেছিল তৎকালীন জালেম শাসক ফেরআউন। কুরআনে আল্লাহ তাদের এই শাস্তির বর্ণনা দিয়ে বলেন:
স্মরণ করো, মুসা তার জাতিকে বলেছিল, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের রক্ষা করেছিলেন ফেরাউন-পরিবারের কবল থেকে, যারা তোমাদের মর্মান্তিক শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদের খুন করত আর তোমাদের নারীদের (দাসী বানিয়ে) জীবিত রাখত। এতে ছিল তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক মহাপরীক্ষা। (সুরা ইবরাহিম/৬)
আরও পড়ুন: ফোরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড় নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী নবীজির
বিশেষ দলের, বিশেষ গোষ্ঠীর, বিশেষ সম্প্রদায়ের হওয়ার কারণে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব পোষণ করে থাকা এটি ফেরআউনি চরিত্র। ফেরআউন ছিল কিবতি বংশের, সে মনে করতো দেশের নেতৃত্ব দিবে শুধু কিবতি বংশের লোকেরা। সে কিবতি বংশের লোকদের মাধ্যমে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোকদেরকে দাস বানিয়ে রেখেছিল। সে তাদের উপর জুলুম করেছে তাদের স্বাধীনতাকে নষ্ট করেছে, অপশাসন করেছে, খেয়াল খুশি মতো বন্দী করে রেখেছে। পৃথিবীতে যারা অপশাসন করে তাদের সবচেয়ে বড় আইডল হলো ফেরআউন। আল্লাহ তাআলা তাকে খুব বেশি দূর এগোতে দেননি এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা তাকে থামিয়ে দিয়েছেন। ফেরআউনকে থেমে যেতে হয়েছে। তার অগ্রযাত্রা বেশি সময় ছিল না।
ফেরআউনের অনুসারী পৃথিবীতে যেই যেখানে আসবে তারা কিছুকাল দাপট দেখাবে গায়ের জোড় দেখাবে জুলুম করবে, অপশাসন করবে কিন্তু শেষ হাসি আল্লাহ জালিমের মুখে কখনো হাসতে দেন না শেষ হাসি আল্লাহ তাআলা মজলুমের মুখেই ফোটান। এই জন্য ফেরআউনের অনুসারীদের কিছুসময় পৃথিবীতে দাপটের সাথে চলতে দেখে আমরা যেন বিভ্রান্ত না হই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিনে, দেশের প্রকৃত নাগরিক হিসেবে, ইতিহাস সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের স্বাধীনতার কথা, আমাদের বিজয়ের কথা আসার সাথে সাথে আমাদের চিন্তায় আমাদের মননে আসা উচিত বনী ইসরাইলের স্বাধীনতার কথা। যেই স্বাধীনতা আল্লাহ তাআলা বনী ঈসরাইলকে দিয়েছেন ফেরআউন নামক জালেমের কবল থেকে। সেখান থেকে আমাদের অনেকগুলো শেখার বিষয় আছে, সেখান থেকে আমরা অনেকগুলো বার্তা পাচ্ছি।
ব্যক্তিগত জীবনেও যদি আমরা আল্লাহ প্রদত্ত শক্তির মাধ্যমে অধীন লোকদের বা আশেপাশের লোকদের প্রতি জুলুম করি, কাউকে নিজস্ব প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে দমিয়ে রাখি বা খেয়াল খুশি মতো অর্ডার করি তাহলে আমি আদর্শিকভাবে ফেরআউনের পথ অনুসরণ করলাম। ফেরআউনের পথ যদি কেউ অনুসরণ করে তাহলে তার পরিণাম হবে ফেরআউনের পরিণামের মতো।
এই পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার নেজাম হলো যে পৃথিবীর সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা কোন জালেমকে নিস্তার দেননি। আল্লাহ তাআলা প্রচুর পরিমাণে ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। জালেমরা আল্লাহ তাআলার ছাড় পেয়ে মনে করে যে, কই কিছুই তো হচ্ছেনা আমরা তো পৃথিবী দাবড়ে বেড়াচ্ছি।
পৃথিবীর ইতিহাস দেখেন ফেরআউনি শক্তি বলেন আর সোভিয়েত ইউনিয়ন বলেন পৃথিবীর কোন জালেম পরাশক্তিকেই আল্লাহ তাআলা অপদস্থ আর লাঞ্ছিত করে পরাস্ত করেননি এমন হয়নি।
আরও পড়ুন: হজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যাংক অফিস সময়ের পরও খোলা থাকবে
বিজয়ের এই মাসে আমাদের প্রতিটা মানুষের এই বার্তা নিতে হবে যে, ব্যক্তিগত জীবনে আমরা কারো প্রতি জুলুম করবো না। আমার গায়ের জোড়ে, দাপটে, প্রভাবে দমিয়ে রাখলাম হয়ত বলার শক্তি ঐ ব্যক্তির নাই সহ্য করা ছাড়া হয়ত তার আর কিছু করার নাই। এটা দেখে আমরা যেন আত্মপ্রবঞ্চনার স্বীকার না হই। প্রতিটি জুলুমকে চাই সেটা ছোট থেকে ছোট বা বড় কোন জুলুম এই সব শ্রেণীর জালেমকেই আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে নগদ শাস্তি দিয়ে থাকেন।