বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ রিভিউ শুনানি শেষে আদেশের জন্য এই দিনটি ধার্য করেন।
আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এ বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘শুনানিকালে বলেছি, বিচার বিভাগকে ‘অ্যাসল্ট করে’ এই শৃঙ্খলা বিধি গ্রহণ করা হয়েছিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে। কারণ, তার আগে ৯ জন বিচারপতি এ বিষয়ে ভিন্ন আদেশ দিয়েছিলেন। এটি বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে তৎকালীন সরকার বাধ্য করেছিল নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের গেজেট সংক্রান্ত আদেশ দিতে। এটি দ্রুত রিভিউ করা প্রয়োজন বলেই আদালতের অনুমতি নিয়ে রিভিউটি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত আজ উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে রোববার রায়ের দিন ধার্য করেছেন।’
১৯৯৪ সালে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বেতন গ্রেড একধাপ নামিয়ে দেয়া হলে তৎকালীন জেলা জজ ও জুডিসিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেনসহ ২১৮ জন বিচারক হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর অনেক বিচারক সে রিটে পক্ষভুক্ত হন। এই রিট শুনানির পর ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট অধস্তন আদালতের বিচারকদের বেতন গ্রেড নামিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে বিচারকদের বিসিএস ক্যাডারভুক্ত করার বৈধতার প্রশ্নে রুল জারি করেন।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতিকে শপথ কে পড়াবেন এ বিষয়ে শুনানি ৭ জুলাই
পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ৭ মে রুল যথাযথ ঘোষণা করে জুডিসিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস করার রায় দেন। তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার চূড়ান্ত রায় দেন।
ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আট বছর পর ২০০৭ সালে মূল নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করে বিচার বিভাগকে আলাদা করা হয়। তবে অপর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের বিষয়টি ঝুলে থাকে।
এক পর্যায়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। তবে সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে শুনানিতে বলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।
বিধিমালাটি গ্রহণ না করে কিছু শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসকে সিনহা। এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়। কিন্তু দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের মতপার্থক্যের কারণে ওই বিধিমালা গেজেট প্রকাশের বিষয়টি ঝুলে যায়। একপর্যায়ে শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে দেশ ছাড়েন ও পরবর্তীতে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
এস কে ঘটনাবহুল পদত্যাগের পর ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বিভাগ নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধির প্রকাশিত গেজেট গ্রহণ করে আদেশ দেন।
তবে শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের উপর শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব ফুটে উঠেছে দাবি করে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড.কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, মইনুল হোসেন, এ এফ হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামাল।
]]>