শিলা, সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে সাভারের রানাপ্লাজার ৬ তলায়, একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সেই রানা প্লাজাতেই ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ভাঙে তার মেরুদণ্ড, সেইসঙ্গে ভাঙে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। তিনি বলেন, কাজ করার সামর্থ্য নেই। মানুষের দেয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছি। সন্তানকে রেখেছি বোনের কাছে।
রানাপ্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে ফিরেছেন নিলুফা বেগমও। তবে এখনও সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে জীবনযুদ্ধে হার না মানা এই নারীকে। তিনি সময় সংবাদকে বলেন, পঙ্গু জীবন নিয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: হতাহতদের ফান্ড অনুসন্ধানে কমিটি গঠনের নির্দেশ উপদেষ্টা আসিফের
একযুগ আগে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনা, রানাপ্লাজা ধস। এতে নিহত হন ১ হাজার ১০০ জন। আহত হন আড়াই হাজার। সেদিন বেঁচে ফেরা সবারই রয়েছে চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার কষ্টের গল্প।
সেই দুর্ঘটনার দিন-মাস-বছর গড়িয়ে যুগ পার হলেও, আহতদের স্থায়ী পুনর্বাসনে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ এখনও বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ- শ্রমিক নেতাদের।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের দুর্ঘটনায় একজন আহত শ্রমিক বেঁচে থাকলে যতদিন পর্যন্ত কাজ করতেন, সেই পরিমাণ টাকা তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে।
গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, দেশে রানা প্লাজা ও তাজরিনের মতো ঘটনাগুলো কমেছে। তবে যারা দোষী, তাদের শাস্তি এখনও হয়নি।
তবে রানাপ্লাজার সেই ধ্বংসস্তূপের লেখা হয়েছে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে বাংলাদেশের বিশ্বজয়ের গল্প। দেশে বর্তমানে 'সবুজ' পোশাক ও বস্ত্র কারখানা ২৪০টি। আর বিশ্বসেরা ১০০টির মধ্যে ৬৬টিই রয়েছে বাংলাদেশে।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: বদলে দিলো বাংলাদেশের পোশাক কারখানার চিত্র!
তবে সেই ঘটনায় স্থগিত করা মার্কিন জিএসপি এখনও বহাল করেনি ওয়াশিংটন। তবুও পোশাক রফতানিতে চীনের পরই অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
নিট শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক শিল্পে সমস্যা হলেও যুক্তরাষ্ট্র অন্য শিল্পে জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখতে এটি একটি অজুহাত মাত্র।
শুধু পোশাক শিল্প নয়, সবখাতে কর্মজীবীদের কর্মপরিবেশ সব সময়ই যেন নিরাপদ হয়, সেই তাগিদ শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদের।
তিনি বলেন, একটি শিল্পের উন্নতি দিয়ে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের কাজ, নিরাপত্তা, মর্যাদা বিবেচনা করা যাবে না। সবখাতে কর্মজীবীদের কর্মপরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের তথ্য বলছে, দেশে ৮ কোটি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ৭ কোটিরই নেই আইনি কোনো সুরক্ষা।
]]>