এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযুক্ত বিএনপি নেতারা বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তালতলী থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
শনিবার (২৪ মে) বিকেলে তিনটার দিকে তালতলী উপজেলার মালিপাড়া স্লুইসগেইট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী দুই ইউপি সদস্য হলেন, বড়বগী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলী আহমদ ফরাজী ও প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন সময় বড়বগী ইউনিয়নের স্বাভাবিক কার্যক্রমে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা দাবি করেন উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. ফোরকান গাজী। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের ভাগ চেয়ে সদস্যদের হুমকি ধমকি দিতে থাকেন। বিষয়টি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছালে পরিষদের ১১ জন সদস্য মো. ফোরকান গাজীর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন উপজেলা বিএনপির সদস্য ফোরকান গাজী।
আরও পড়ুন: ‘১৬ বছর আওয়ামী লীগ পিটাইছি, বাইরে বের হ, তারপর দেখতেছি’ বিএনপি নেতার হুমকি
পরে শনিবার দুপুরে বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন পরিষদ থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার পথে তাকে মালিপাড়া স্লুইসগেইট এলাকায় তুলে নিয়ে যান ফোরকান গাজী ও তার লোকজন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে আরেক ইউপি সদস্য আলী আহমদ ফরাজী অটোরিকশায় যাওয়ার সময় তাকেও পথরোধ করে আটকে রেখে উভয়কে মারধর করেন তারা। এতে রক্তাক্ত আহত হন প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য আলী আহমদ ফরাজী বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি নেতা ফোরকান গাজী পরিষদে গিয়ে হতদরিদ্রদের বরাদ্দকৃত চালসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি বরাদ্দের ভাগ দাবি করে। কিন্তু তার এ অনৈতিক আবদার আমরা পূরণ করতে না পারায় তিনি পরিষদের সকলকে গালমন্দ করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। তার এমন আচরণে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। এর জের ধরে আমাদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আমাকে মারধর করেছে তিনি।’
এ বিষয়ে বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ফোরকানের বিরুদ্ধে পরিষদের সকল ইউপি সদস্য মিলে অভিযোগ দিয়েছি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের মারধর করেছেন।’
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা বিএনপি সদস্য মোঃ. ফোরকান গাজী বলেন, ‘তাদের সাথে আমার লোকজনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় প্যানেল চেয়ারম্যান নাকে আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’
তিনি আরও জানান, এ বিষয়টি উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহবুব আলম মামুন ভাই জানেন। তিনিই বিষয়টি সমাধান করে দিবেন।
আরও পড়ুন: মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে ৭ দিনের আলটিমেটাম বিএনপি নেতার
তবে এ বিষয়ে জানতে মাহবুব আলম মামুনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদুল হক বলেন, ‘ফোরকান আমার দলের সদস্য তা ঠিক কিন্তু তিনি আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। তিনি উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতার কথায় চলে। তার ফোরকানের নৈতিক অনৈতিক, নানাভাবে সখ্যতা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই ইউপি সদস্যকে মারধরের বিষয়টি জেনেছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে জেলার দলীয় ফোরামে সুপারিশ করা হবে।’
এ বিষয়ে তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজালাল বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। দুই ইউপি সদস্যকে থানার এসে অভিযোগ দিতে বলেছি। তারা অভিযোগ দিলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নেতা ফোরকানের বিরুদ্ধে বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের ১১ জন সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে দিয়েছেন। তিনি আমাকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. উম্মে সালমা বলেন, ‘দুই ইউপি সদস্যকে মারধরের বিষয়টি জেনেছি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি।’