একদিকে নির্বাচনী ডামাডোল, অন্যদিকে নির্বাচনের পদ্ধতি ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। বিশেষ করে বড় দুই দল বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে অনৈক্য, বাংলাদেশকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় বৈঠকও ফলশূন্য। বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে সাংবিধানিক আদেশের পর গণভোটের মাধ্যমে সনদের বৈধতা দেয়ার প্রস্তাবেও একমত হতে পারেনি দলগুলো। একই সময়ে দুই কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে সভা সমাবেশ করছে জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো। সব মিলিয়ে নির্বাচন সামনে রেখে এক গোলকধাঁধার চক্করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এ অবস্থা চলতে থাকলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন,
সংকটা একটা তৈরি হয়ে গেছে। এই সংকট দূর করা না গেলে তৃতীয় পক্ষ তো আসবেই। সবাইকেই তো কিছু ছাড় দিতেই হবে। কেউ যদি বলে, কিছু ছাড় দেয়া হবে না, তাহলে তো হতে পারে না।
আরও পড়ুন: জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন সংকটে ঐকমত্য কমিশন!
এ অবস্থায় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতির পরামর্শে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে ৯টি দল। গত সপ্তাহের শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের ৬ দল, এবি পার্টি, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ বৈঠক করেছে। নেতারা বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছেন। এর বাইরেও এই দলগুলো একসঙ্গে কোনো নির্বাচনী জোট করতে যাচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি নেতারা।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘দুইটা পদ্ধতিই অনুসরণ করা যায় কি-না, সেটা দেখছি। আশা করছি পরবর্তী ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের আগে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন,
বিএনপি কেন্দ্রিক এক ধরনের বলয় আছে। জামায়াত ও ইসলামি দলগুলো এক ধরনের বলয় তৈরি করেছে। আমরা মনে করছি, মধ্যমপন্থি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশপন্থি দলগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগটা বাড়ানো দরকার। এরই অংশ হিসেবে আমরা বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলছি এবং সংস্কার প্রশ্নে এক জায়গায় আসার চেষ্টা করছি।
সরোয়ার তুষার আরও বলেন, ‘একসঙ্গে একীভূত হবে কি-না নাকি জোট হবে নাকি অ্যালায়েন্স হবে, সেটা আমরা আরও কিছু দিন গেলে বুঝতে পারবো।’
আরও পড়ুন: তৃতীয় পক্ষের উত্থানের শঙ্কা বিশ্লেষকদের
গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন,
আলোচনা করেছি। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে বসার জন্য আমরা সেখানে কয়েকজনকে দায়িত্বও দিয়েছি। আমরা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দূরত্ব কীভাবে কমিয়ে একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারি, সেই চেষ্টা করছি। আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই জোটবদ্ধভাবে হবে। এখন এখানে আসলে গণ অধিকার পরিষদ এককভাবেই জোট করবে নাকি অন্য কোনো দলের সঙ্গে মিলে জোট হবে, সেই সিদ্ধান্তে এখনও আমরা যাইনি।
এক টেবিলে আলোচনার এই উদ্যোগ রাজনীতিতে ইতিবাচক শিষ্টাচারের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন নেতারা। আগামী দিনে এই ধারা অব্যাহত থাকলে জনগণের জন্য সুফল মিলবে বলে মত তাদের।
]]>