রেললাইনের দুপাশে ছাড়াও রংপুর নগরীতে এমন অসংখ্য আবাসন গড়ে উঠেছে যাদের অধিকাংশই নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বসতবাড়ি হারিয়েছেন কিংবা কর্মসংস্থানের জন্য গ্রাম থেকে নগরে এসেছেন। বসবাসকারী বেশিরভাগের পেশা সাধারণ শ্রমিক, রিকশা চালক অথবা বাসা-বাড়ির গৃহপরিচারিকা ।
এমন ভাসমান জনগোষ্ঠীর সুনির্দিষ্ট তালিকা না থাকায় থেকে যাচ্ছে সামাজিক সুরক্ষার বাইরে। রংপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, এই বিষয়ে কোনো তথ্যসংগ্রহ বা জরিপ করা হয়নি। ফলে তাদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) গবেষণা বলছে, সামাজিক সুরক্ষার ৮০ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে গ্রামে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট সামাজিক সুরক্ষা ব্যয়ের মাত্র ৪ শতাংশ নগরের দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ ছিল।
আরও পড়ুন: মাছ-মাংস দিয়ে ‘২ টাকার হোটেলে’ পেটপুরে ভাত খাচ্ছেন দরিদ্র মানুষ!
ফলে ভাসমান মানুষগুলো নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না, পরিবার নিয়ে অসহায়ভাবে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
সবশেষ পরিবার আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বলছে, ২০১০ সালে নগরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৪ লাখ, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯ লাখে। একই সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বেড়েছে এক কোটি ৩৩ লাখ থেকে এক কোটি ৫৩ লাখে। গবেষকদের মতে, বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাম্মী ইসলাম বলেন, প্রথমে আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এরপর ধাপে ধাপে কারিগরি শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষুদ্র ঋণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সুযোগ দিলে এই জনগোষ্ঠী স্বাবলম্বী হতে পারবে।
গবেষণা বলছে, দেশের মোট সুবিধাভোগীর মাত্র ২০ শতাংশ নগরে থাকেন। গ্রামে যেখানে ৪৪ শতাংশ পরিবার অন্তত একটি সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা পাচ্ছে, শহরে সেই হার মাত্র ২৪ শতাংশ।
]]>