‘বালাগাল উলা বি কামালিহি’ যেভাবে রচিত হলো

৩ সপ্তাহ আগে
‘বালাগাল উলা বি কামালিহি’। একটি আরবি নাত। এটি শুধু আরবি সাহিত্যেই প্রসিদ্ধ নয় বরং বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় কবিতাও এটি। শেখ সাদী রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসায় এ নাতটি লিখেছেন। যা বিশ্বব্যাপী অগণিত মানুষের মুখে মুখে সমাদৃত।

শেখ সাদীর পূর্ণ নাম শায়খ আবু মুহাম্মদ মুসলেহুদ্দীন সাদি ইবনে আব্দুল্লাহ শিরাজি। তিনি ফারসি কবিদের অন্যতম। ফারসিভাষী দেশের বাইরেও তিনি সমাদৃত। ধ্রুপদী সাহিত্যের ক্ষেত্রে তাকে একজন উঁচু মানের কবি ধরা হয়। তিনি তার লেখার মানের জন্য এবং তার সামাজিক এবং নৈতিক চিন্তার গভীরতার জন্য স্বীকৃত।

 

তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৫৮৯ হিজরি মোতাবেক ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের শিরাজে। ছোটবেলার তার বাবা মারা গিয়েছিলেন। শিরাজ ত্যাগ করার পরে তিনি বাগদাদের নিজামিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, যেখানে তিনি ইসলামি বিজ্ঞান, আইন, প্রশাসন, ইতিহাস, ফারসি সাহিত্য এবং ইসলাম ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন করেন। তার মৃত্যু ৬৯৪ হিজরি মোতাবেক ১২৯৪ খ্রিষ্টাব্দে।

 

‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার মতে, তাঁর রচিত ‘বুস্তান’ গ্রন্থটি সকল যুগের একশ সেরা গ্রন্থের একটি হিসেবে বিবেচিত। ‘বুস্তান’ এবং ‘গুলিস্তাঁ’ ছাড়াও শেখ সাদি চারটি প্রেমের কবিতার বই (গজল) এবং বেশ কয়েকটি কাসিদা রচনা করেছেন। রুমি এবং হাফিজের সঙ্গে তাঁকেও ফারসি ভাষার অন্যতম প্রধান একজন গজল লেখক মনে করা হয়।

 

আরবি সাহিত্যে তো বটেই, বিশ্বসাহিত্যেও সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতাগুলোর একটি এটি। কবিতাটি এমন-

 

ﺑﻠﻎ ﺍﻟﻌﻼ ﺑﻜﻤﺎﻟﻪ -- ﻛﺸﻒ ﺍﻟﺪﺟﻰ ﺑﺠﻤﺎﻟﻪ
ﺣﺴﻨﺖ ﺟﻤﻴﻊ ﺧﺼﺎﻟﻪ--  ﺻﻠﻮﺍ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ

 

উচ্চারণ: ‘বালাগাল উলা বি-কামালিহি-- কাশাফাদ্দুজা বি জামালিহি,
                হাসুনাত জামিউ খিসালিহি-- সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি।’

 

এর ভাবার্থ হচ্ছে: ‘সাধনায় যিনি সুউচ্চ মর্যাদায় পূর্ণতায় পৌঁছেছেন,

                           যার সৌন্দর্যের ছটায় বিতাড়িত হয়েছে সমস্ত আঁধার,

                           সব সচ্চরিত্রের সম্মিলন ঘটেছে যার মাঝে, 

                           তবে আসুন দরুদ ও সালাম জানাই তার ও তার বংশধরদের প্রতি।’

 

 

এই কবিতাটি ৪ পদে লিখেছিলেন। তার বিশ্বখ্যাত গ্রন্থ ‘গুলিস্তাঁ’র একটি অংশে তা পাওয়া যায়। শেখ সাদি আরবি ভাষায় যে কয়েকটি কবিতা লিখেছিলেন তারমধ্যে অন্যতম ছিল এই কবিতাটি। কবিতাটি উম্মতে মুসলিমার হৃদয়ে তা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কবিতাটি লেখার সময়কাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, ১২৫৫-৫৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই কবিতাটি লিখেছিলেন তিনি। কারণ ১২৫৭ খ্রিষ্টাব্দ তথা ৬৫৫ হিজরি সালে গুলিস্তাঁ গ্রন্থটি রচনা শেষ করেন তিনি।

 

আরও পড়ুন: নবীজিকে স্বপ্নে দেখার আমল

 

শেখ সাদির অমর কবিতা তথা নাতে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামটি আজও সারাবিশ্বের মুসলিমরা হৃদয়ে ধারণ করে মনের অজান্তেই গেয়ে ওঠেন- ‘বালাগাল উলা বিকামালিহি...’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন