তবে বিল জুড়ে নানা অব্যবস্থাপনা ও খাদ্য সংকট দিনকে দিন পাখি উপস্থিতি আশঙ্কা জনকহারে কমছে। জলজ উদ্ভিদ রক্ষাসহ বাইক্কা বিলকে আর আকর্ষণীয় করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগের কথা জানালেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কমকতা মো. ইসলাম উদ্দিন।
শীত সকালের কুয়াশা ভেদ করে হাইল হাওড়ের বাইক্কা বিলজুড়ে পরিযায়ী পাখির ডানা ঝাপটানো, কোলাহল, কিচিরমিচির শব্দ- বিল পাড়ের নিরব-নৈশব্দতা ভেঙে অন্য রকম এক পরিবেশের জন্ম দিয়েছে। এক শীত সকালে সরেজমিন বাইক্কা বিলে দেখা যায়, লম্বা পায়ের ঠোঁট রাঙানো বেগুনি কালেম, সাদা মাথার পাগড়ি পড়া কালকৌট, লেঞ্জা, শীতের রোদ পোহানো পানকৌড়ি, জলমোরগসহ অসংখ্য দেশি-বিদেশি পাখির- এ যেন এক স্বর্গ রাজ্য। আর এসব প্রকৃতগত দৃশ্য দেখে মনোমুগ্ধতার কথা জানালেন বাইক্কা বিলে আসা একাধিক পর্যটক।
আরও পড়ুন: ভ্রমণের নতুন স্পট ‘আজব রাজ্য’ চর বিজয়
তবে বিল পাড়ের স্থানীয় লোকজন জানালেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাওড় পাড়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, জলবায়ুর প্রভাব, পাশাপাশি বাইক্কা বিলজুড়ে ব্যাপক অব্যবস্থাপনা বিলের জলজ উদ্ভিদ পদ্ম, মাখনা, গুল্মলতা একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে। এতে শুষ্ক মৌসুমে এসে এ অভয়াশ্রমে- মাছ, পশুপাখির খাদ্যভাব তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে। বিস্তৃত এ বাইক্কা বিলজুড়ে শুধু সাদা পানি আর পানি। এতে খাদ্য সংকটে পরিযায়ী পাখি দিনকে দিন পথ বদলে নিয়েছে। এতে বাইক্কাবিলে আগের মতো পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে। শুধু তাই না- মাছ শিকার করতে যেয়ে অভয়াশ্রমের আশপাশের বিল শুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। এতে করে বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমের পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। এরইমধ্যে পানি ও খাদ্য সংকটে বিলের সংরক্ষিত মাছ ভেসে উঠতে দেখা গেছে। তাছাড়া আগের মাছের নির্ধারিত অভয়াশ্রমটি এখন আর দেখা যাচ্ছে না।
বাইক্কা বিল বড় গাঙ্গিনা ব্যবস্থাপানা কমিটির অন্যতম সিনিয়র সদস্য মো. খেজুর মিয়া বিলজুড়ে নানা সংকটের কথা অনায়াসে জানালেন।
তিনি জানান, বন্যার তোড়ে বিনষ্ট হয়ে আগের নির্ধারিত অভয়াশ্রমটি এখন আর নেই। নতুন করে বিলের পশ্চিমপাড়ে অভয়াশ্রম তৈরি করা হচ্ছে। দেখা গেলো কজন শ্রমিক পশ্চিম তীরে অভয়াশ্রম নির্মাণের কাজ করছেন।
বাইক্কা বিলের সার্বিক বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় নব্য যোগদানকারী নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি জানালেন, বাইক্কা রক্ষায় জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেনসহ স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে সম্প্রতি এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে এ বিলকে আরও কীভাবে আকর্ষণীয় করে তা সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র ধরে রাখা যায় তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় ৩ স্থান
এদিকে ঢাকা এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আসা একাধিক পর্যটকের সঙ্গে সময় সংবাদেরও কথা হয়। ঢাকার পর্যটক সাব্বির জানালেন, এত চমৎকার একটি পর্যটন স্থান। অথচ বাইক্কা বিলে আসার রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা।এলাকাজুড়ে ময়লা আবজনার স্তূপ। এগুলো সমাধান করতে পারলে এলাকাটিতে পর্যটক বাড়বে।
অন্য আরেকজন পর্যটক শারমিন আক্তার জানালেন, মনে হয় প্রশাসনিক নজরদারি নেই। যদি প্রশাসনিক নজরদারি থাকতো তাহলে এ অবস্থা হওয়ার কথা নয়। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়, বিলুপ্ত প্রজাতি মাছের বংশ রক্ষার্থে হাইল হাওড়ের তিনটি বিলের সমন্বয়ে ১৭০ হেক্টর আয়তনের জলাভূমিকে একটি স্থায়ী অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়।