বাংলাদেশের প্রথম অ্যাকশন হিরো ছিলেন জসিম

১ দিন আগে
ঢালিউড সিনেমায় অ্যাকশনের পথপ্রদর্শক ছিলেন চিত্রনায়ক জসিম। ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতার আজ ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। মাত্র ৪৮ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান গুণী এ শিল্পী।

সিনেমায় ‘খলনায়ক’র অভিনয় করে ক্যারিয়ার শুরু করলেও অ্যাকশন সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় করে ‘নায়ক’ হয়ে ওঠেন জসিম। ঢাকার নবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ নেয়া জসিমের পারিবারিক নাম আবুল খায়ের জসিম উদ্দিন। তবে পারিবারিক নামের বদলে চলচ্চিত্রে ‘জসিম’ নামে পরিচিতি পান সত্তর দশকের এ নায়ক।

 

তিনি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন। দেশ স্বাধীন করে ঢাকাই সিনেমার আরেক জনপ্রিয় নায়ক সোহেল রানার মতই পা বাড়ান চলচ্চিত্র জগতে।

 

প্রখ্যাত অভিনেতা আজিমের হাত ধরে সিনেমা জগতে পা রাখেন জসিম। ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। নিয়মিতই সিনেমায় অভিনয় করতেন ‘খলনায়ক’ চরিত্রে।

 

দর্শক নজরে পড়েন ‘রংবাজ’ সিনেমায় অভিনয় করে। এ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন ঢালিউডের মিষ্টি জুটি নায়ক রাজ রাজ্জাক ও কবরী জুটি। এ সিনেমায় খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন দর্শক নজরে পড়েন জসিম।

 

এরপর ১৯৭৭ সালে দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’ সিনেমায় অভিনয় করে বাংলা সিনেমায় আলোড়ন তোলেন তিনি। এ সিনেমাটি সাড়া জাগানো হিন্দি ছবি ‘শোলে’র রিমেক। সেখানে খলনায়ক ‘গব্বার’র চরিত্র করেছিলেন জসিম। খোদ শোলে ছবির নামকরা চরিত্র গব্বার সিংয়ের চরিত্রটি করা ভারতীয় খলনায়ক আমজাদ খান এ সিনেমা দেখে জসিমের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

 

ঢালিউডে জসিম নায়ক হয়ে ওঠেন নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর হাত ধরে। নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু এ প্রসঙ্গে বলেন,

ওয়াসিম ও  শাবানা অভিনীত ‘রাজ দুলারী’তেও  ভিলেন ছিলেন জসিম। ওই সিনেমায় খলনায়ক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শুট-বুট-হ্যাট-জ্যাকেট পরে শুটিং করতে হতো জসিমকে। শুটিংয়ে জসিমকে দেখতে আমার তখন তামিলের আলোচিত নায়ক শিবাজী গণেশের মতো লাগতো।

 

নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু আরও বলেন,

আমি জসিমকে সে কথা জানাই। শুনে খুব আনন্দিত হন তিনি। তখন আমি শুধু সিনেমার গল্পই লিখি। জসিমকে বলেছিলাম, কোনোদিন সিনেমা বানালে তাকে নায়ক করে অবশ্যই সিনেমা বানাবো। আমার নির্মিত সিনেমা ‘ওমর শরীফ’-এ তাকে নায়ক বানাই। সে সিনেমা ভালো ব্যবসা করে।

 

এ সিনেমায় নায়ক হয়ে ওঠার জার্নিটা মোটেও সহজ ছিল না জসিমের। অভিনয়ের পাশাপাশি গানের দৃশ্যে অভিনয় করতে বেশ দোটানায় পড়েছিলেন তিনি। দর্শকরা ‘নায়ক’ হিসেবে কীভাবে গ্রহণ করবে সে দুশ্চিন্তা তাকে পেয়ে বসে। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে যা ঘটে তা এক ইতিহাস। সিনেমায় নায়ক হিসেবে দর্শকদের রিয়েকশন দেখতে নির্মাতা ঝন্টুর সাথে গুলিস্তানের একটি হলে সিনেমাটি দেখতে যান জসিম। হলে দর্শকদের উচ্ছ্বাস ও তার অভিনয়ের প্রশংসা করতে দেখে আনন্দে সেদিন কেঁদে ফেলেন তিনি।

 

দর্শক ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে নতুন নায়ক জসিমকে। এরপরই বদলে যায় অভিনেতা জসিমের ক্যারিয়ার। তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার ‘অ্যাকশন হিরো’। 

 

ক্যারিয়ারে নায়ক জসিমের উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামী’, ‘লাল গোলাপ’, ‘দাগী’, ‘টাইগার’, ‘হাবিলদার’, ‘ভালোবাসার ঘর’ ইত্যাদি।

 

আরও পড়ুন: ইলিয়াস কাঞ্চনের অস্ত্রোপচার করেছে তিনটি রোবট!

 

ব্যক্তিজীবনে বেশ উদার ও শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন তিনি। যে কারণে চিত্রনায়িকা সুচরিতা তার প্রেমে পড়েন। ১৯৭৭ সালে দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’ সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে নায়ক নয়, খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করা মানুষটারই প্রেমে পড়েন নায়িকা। ভালোবেসে তাকে বিয়েও করেন। কিন্তু সে সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। এরপর জসিম ঢাকার প্রথম সবাক চলচ্চিত্রের নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন।

 

আরও পড়ুন: ‘সোলজার’র প্রথম ঝলকে বিশেষ বার্তা দিলেন শাকিব খান?

 

১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জসিম। মাত্র ৪৮ বছর বয়সে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়। তবে অভিনেতার মৃত্যু হলেও দর্শক হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন বাংলার এ ‘অ্যাকশন কিং’। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন