বাংলাদেশে স্মার্টফোন প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ

১ সপ্তাহে আগে
বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রিকশাচালক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী কম বেশি সবার হাতেই এখন স্মার্টফোন দেখা যায়। কিন্তু আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরে বাংলাদেশের স্মার্টফোন প্রযুক্তি ব্যাপক আসতে পারে এমনটাই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। নিচে থেকে দেখে নেয়া যাক ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলো।

নেটওয়ার্ক বিপ্লব

বাংলাদেশে ৫জি সেবা এখন শুরুর পথে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে ৫জি টাওয়ার বসছে। আগামী দুই-তিন বছরে সারাদেশে ৫জি ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মানে হলো এখনকার চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি দ্রুত ইন্টারনেট স্পিড। এই দ্রুত গতির ইন্টারনেট শুধু ফেসবুক দ্রুত চালানোর জন্য নয়। ৫জি আনবে নতুন সম্ভাবনা। যেমন- ক্লাউড গেমিং, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শিক্ষা, টেলিমেডিসিন, স্মার্ট ফার্মিং। একজন কৃষক তার মোবাইল দিয়ে রিয়েল টাইমে ফসলের স্বাস্থ্য মনিটর করতে পারবেন। একজন রোগী গ্রামে বসে ঢাকার ডাক্তারের কাছে ভিডিও কনসালটেশন নিতে পারবেন কোনো ল্যাগ ছাড়াই।


আর ২০৩০ সালের দিকে হয়তো ৬জি আসবে, যার স্পিড হবে কল্পনাতীত। সেই সময় হলোগ্রাফিক ভিডিও কল, এআই-পাওয়ার্ড রিয়েল টাইম ট্রান্সলেশন সবকিছুই থাকবে হাতের নাগালে।


দেশীয় স্মার্টফোন শিল্পের উত্থান

ওয়ালটন, সিমফনি, ভিশন-এর মতো বাংলাদেশি ব্র্যান্ডগুলো এখন শুধু সাধারণ মানের ফোন তৈরি করে আসছে। কিন্তু ভবিষ্যতে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর হাই-এন্ড স্মার্টফোন বাজারেও প্রবেশ করবে। এই লক্ষ্যে হাইটেক পার্ক এবং অন্যান্য টেক হাবগুলোতে মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট স্থাপিত হচ্ছে।


সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ উদ্যোগের কারণে দেশীয় উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে দেশেই তৈরি হবে মানসম্মত, সাশ্রয়ী মূল্যের স্মার্টফোন। শুধু তাই নয়, রপ্তানি বাজারেও আমরা প্রবেশ করতে পারবো। বাংলাদেশি ফোন হয়তো একদিন দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার বাজারে জনপ্রিয় হবে।


এআই এবং মেশিন লার্নিংয়ের ব্যাপক ব্যবহার

বাংলাদেশের বিশাল জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এখনো ডিজিটাল সাক্ষরতায় পিছিয়ে। এআই-পাওয়ার্ড স্মার্টফোন এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। বাংলা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, যেটা আঞ্চলিক উচ্চারণ বুঝবে, নিরক্ষর মানুষদের জন্য গেম চেঞ্জার হবে। কৃষিকাজে এআই ইন্টিগ্রেটেড ফোন অ্যাপ কৃষকদের বলে দিতে পারবে কখন সার দিতে হবে, কখন পানি দিতে হবে, কোন রোগ হয়েছে এবং তার চিকিৎসা কী। ফোনের ক্যামেরা দিয়ে গাছের পাতা স্কান করলেই রোগ নির্ণয় হয়ে যাবে। স্বাস্থ্যসেবায়ও এআই বিপ্লব আনবে। স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়ে চোখ, ত্বক বা জিহ্বা স্কান করে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় সম্ভব হবে। এটা বিশেষভাবে কাজে আসবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ডাক্তার পাওয়া কঠিন।


আরও পড়ুন: পুরানো স্মার্টফোন কেনার আগে যে সব বিষয়ে খেয়াল রাখবেন


সাশ্রয়ী মূল্যে প্রিমিয়াম ফিচার

প্রযুক্তি বিকাশ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে দাম ক্রমশ কমছে। আগে যেসব ফিচারের কিনতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার খরচ হতো, এখন সেগুলো ফিচার ১৫-২০ হাজার টাকার ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে। এই ট্রেন্ড ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে নিম্ন বাজেটের ফোনের মধ্যে ৫জি নেটওয়ার্ক, ১০৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, অ্যামোলেড ডিসপ্লে, ফাস্ট চার্জিং, এবং শক্তিশালী এআই চিপসেট এর মতো ফিচার যুক্ত থাকতে পারে। দামি ফোন এবং বাজেট ফোনের মধ্যে ব্যবধান তুলনামূলকভাবে কমবে। এটা বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশের জন্য বিশাল সুবিধা হতে পারে। যে কোন স্মার্টফোন দামের সাথে ফিচারের তুলনা কর তুলনা করতে করা যাবে MobileMaya এর ওয়েবসাইট থেকে।  


ডিজিটাল ইকোনমি

মোবাইল ব্যাংকিং বা ডিজিটাল পেমেন্ট এখন আমাদের জীবনের অংশ। ভবিষ্যতে স্মার্টফোনই হতে পারে ডিজিটাল ওয়ালেট। এনএফসি টেকনোলজি সম্পন্ন ফোন দিয়ে শুধু ট্যাপ করে পেমেন্ট করা যাবে কোনো পিন বা ওটিপি ছাড়াই। রেমিট্যান্স পাঠানো যাবে সেকেন্ডের মধ্যেই এবং খরচ হবে নামমাত্র। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্মার্টফোন দিয়েই তাদের সম্পূর্ণ বিজনেস পরিচালনা করতে পারবেন ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজমেন্ট সব জটিল কাজ।


পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি

ভবিষ্যতের স্মার্টফোনগুলো হবে আরও পরিবেশবান্ধব। স্ট্যান্ডার্ড ফিচার হিসেবে যুক্ত হতে পারে সোলার চার্জিং, রিসাইকেল করা ম্যাটেরিয়াল, লম্বা লাইফস্প্যান এর মতো পরিবেশ বাধন্ধব সিস্টেম। বাংলাদেশের মতো দেশে সোলার চার্জিং বিশেষভাবে উপকারী হবে। বিদ্যুৎ সমস্যা থাকলেও ফোন চার্জ হবে বিনা বিদ্যুতে সোলারের মাধ্যমে।  


ব্যাটারি টেকনোলজিতে বিপ্লব আসছে। গ্রাফিন এবং সলিড-স্টেট ব্যাটারি আসবে যা এক চার্জে এক সপ্তাহ চলবে এবং পাঁচ মিনিটে ফুল চার্জ হবে। এটা বাংলাদেশের মতো দেশে, যে সকল অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের বেশি সমস্যা হয় সে সকল অঞ্চলে জীবন বদলে দিতে পারে এই ফিচার।


আরও পড়ুন: বাংলাদেশে এলো ওয়ানপ্লাসের নতুন নর্ড ৫ সিরিজের স্মার্টফোন ও আইওটি ডিভাইস


শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে স্মার্টফোন

কোভিড-১৯ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে অনলাইন শিক্ষার গুরুত্ব। ভবিষ্যতে স্মার্টফোন হবে প্রধান শিক্ষার মাধ্যম। এআর এবং ভিআর টেকনোলজি ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিকভাবে বিজ্ঞান পড়া যাবে। ইতিহাসের ঘটনা ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে অভিজ্ঞতা নেওয়া যাবে সহজেই। দক্ষতা উন্নয়নেও স্মার্টফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এআই-পাওয়ার্ড পার্সোনালাইজড লার্নিং প্ল্যাটফর্ম প্রতিটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনার গতি অনুযায়ী পাঠ্যক্রম তৈরি করবে। গ্রামের একজন তরুণ ঢাকায় না গিয়েই আন্তর্জাতিক মানের কোডিং, ডিজাইন, মার্কেটিং শিখতে পারবে স্মার্টফোন দিয়েই।


বাংলাদেশের স্মার্টফোন প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে স্মার্টফোনের একটা বিশাল মার্কেট আছে। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তিপ্রেমী এবং দ্রুত নতুন টেকনোলজি গ্রহণ করে। প্রযুক্তির এই ক্ষাতে সরকারি উদ্যোগ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ দুটোই বাড়ছে। আগামী দশকে বাংলাদেশ হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার বড় একটি স্মার্টফোন হাব। প্রযুক্তি শুধু বিলাসিতা নয়, এটা এখন উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন