বাংলাদেশ-কুয়েত অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ঐতিহাসিক বৈঠক

৩ সপ্তাহ আগে
বাংলাদেশ-কুয়েত অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে কুয়েত চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাথে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের একটি গুরুত্ব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে কুয়েত চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেসিসিআই) ভবনের আল বুম হলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং অন্যান্য বাণিজ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। 

 

আলোচনায় দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ অন্বেষণ এবং টেকসই বাণিজ্য অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার উপর আলোকপাত করা হয়। বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের মধ্যে তৈরি ও বোনা পোশাক, ওষুধ, কৃষিপণ্য এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো বিভিন্ন শিল্পের কোম্পানিগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

 

কেসিসিআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট খাতের বিশিষ্ট কুয়েতি ব্যবসায়ীরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালে এফবিসিসিআই ও কেসিসিআই-এর মধ্যে সহযোগিতার একটি প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এই চুক্তির পর এটিই ছিল প্রথম বৈঠক।

 

কেসিসিআই-এর সহকারী মহাপরিচালক  ফিরাস এম. আল-ওদা স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সভা শুরু করেন। তিনি প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং কুয়েত ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সহযোগিতা আরও গভীর করার জন্য চেম্বারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

 

আরও পড়ুন: ৩৪ বাংলাদেশিসহ ১৭৬ বিদেশি বন্দিকে ফেরত পাঠালো মালয়েশিয়া

 

এরপর কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন,  সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন যে এই সভা কেবল ২০১৬ সালের সহযোগিতা প্রোটোকলের চেতনাকে অব্যাহত রাখেনি বরং দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

 

তিনি বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, তরুণ জনসংখ্যা এবং শক্তিশালী শিল্প প্রবৃদ্ধি, বিশেষ করে পোশাক, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি, জাহাজ নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে কুয়েতি বিনিয়োগকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য সুযোগ প্রদানকারী হিসেবে তুলে ধরেন।

 

বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) এবং প্রতিনিধিদলের প্রধান  মো. আবদুর রহিম খান বাংলাদেশের গতিশীল ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে  বিস্তারিত উপস্থাপনা প্রদান করেন। তিনি দেশের কৌশলগত অবস্থান, দক্ষ কর্মীবাহিনী এবং জনসংখ্যাগত সুবিধার উপর জোর দেন।

 

তিনি পোশাক, ওষুধ, ভোগ্যপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, প্লাস্টিক, চামড়া, পাদুকা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন, পাশাপাশি সাম্প্রতিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিদেশি বিনিয়োগকে সহজতর করার লক্ষ্যে নীতিগত সংস্কারও করেন।

 

আরও পড়ুন: দুবাইয়ে লটারিতে ৩৩ লাখ টাকা জিতলেন বাংলাদেশি

 

তিনি ব্যবসা করার সহজতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত এক-স্টপ পরিষেবার কথাও তুলে ধরেন।   আবদুর রহিম খান কুয়েতি ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশ সফরের জন্য এবং এই সুযোগগুলি প্রত্যক্ষভাবে দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

 

বাংলাদেশের শিল্প প্রতিনিধিরা খাত-নির্দিষ্ট সম্ভাবনাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন, বিনিয়োগ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন এবং তাদের কুয়েতি প্রতিপক্ষদের বাংলাদেশে সুযোগ-সুবিধাগুলি অন্বেষণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানান, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সুযোগ-সুবিধাগুলি অন্বেষণ করার জন্য।

 

কুয়েতি পক্ষ বাংলাদেশ থেকে আমদানি সম্প্রসারণ এবং আউটসোর্সিং সহযোগিতা অন্বেষণে দৃঢ় আগ্রহ প্রকাশ করে। কেসিসিআই প্রতিনিধিরা বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলি মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধিদল সফর আয়োজনের পরিকল্পনারও ইঙ্গিত দেন।

 

বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির যৌথ লক্ষ্যে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে বৈঠকটি শেষ হয়, যা একটি শক্তিশালী এবং আরও সহযোগিতামূলক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের পথ প্রশস্ত করে।

 

আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামীম আহসানকে বিদায়ী সংবর্ধনা

 

কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত প্রটোকলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কুয়েত ব্যবসায়ীদের মধ্যে তথ্য বিনিময়, প্রদর্শনী আয়োজন এবং যৌথ উদ্যোগ নেয়ার অঙ্গীকার করা হলেও সেটা তেমন ফলপ্রসূ হয়নি দীর্ঘদিন। দুদেশের মধ্যে এই বৈঠকের মধ্যদিয়ে নতুন সুচনা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা। 

 

অন্যদিকে কুয়েত চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কেসিসিআই-এর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ফিরাস মুহাম্মদ আল-ওদেহ সময় সংবাদকে বলেন এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে একটি ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, যা ভবিষ্যতের আরও বৃহত্তর সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

 

কুয়েতের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বাংলাদেশের জন্য। তিনি আরও বলেন, আজকের এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো কুয়েত ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে প্রতিনিধিদলের ক্ষেত্র এবং দক্ষতার সঙ্গে সম্পর্কিত নতুন সুযোগগুলো খুঁজে বের করা। এটি দুই দেশের মধ্যে একটি ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, যা ভবিষ্যতের আরও বৃহত্তর সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

 

তিনি আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশের জন্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখব। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এখনও সীমিত হলেও নতুন উদ্যোগ ও প্রটোকলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কুয়েতের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আগামী দিনে আরও বিস্তৃত হতে পারে। বাংলাদেশ কুয়েতের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে এই সভা হবে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন