দৃষ্টি সংযত করার নির্দেশ
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ মুমিনদের বলে দাও, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য অধিক পবিত্র। (সুরা নুর:৩০) আয়াতের পরের অংশে মুমিন নারীদেরও একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বোঝা যায়, দৃষ্টি সংযত না করা ব্যভিচারের প্রথম ধাপ।
হারাম দৃষ্টির প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا নিশ্চয়ই কানের, চোখের এবং অন্তরের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুরা ইসরাইল:৩৬)
চোখের ব্যভিচারও গুনাহ
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
زِنَا الْعَيْنِ النَّظَرُ চোখের ব্যভিচার হলো দেখা। (সহিহ বুখারি:৬২৪৩, সহিহ মুসলিম:২৬৫৭) অর্থাৎ, চোখ যখন হারাম দৃশ্য দেখে, তখন তা ব্যভিচারের একটি অংশ হয়ে যায়, যদিও শারীরিকভাবে কিছু না ঘটে।
আরও পড়ুন: ইসরাইল কি ধ্বংসের পথে? কোরআন-হাদিস কী বলছে?
প্রথম দৃষ্টিকে মাফ, পরবর্তী দৃষ্টিতে গুনাহ
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হজরত আলি রা. কে বলেন,
يَا عَلِيُّ! لَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ، فَإِنَّمَا لَكَ الْأُولَى، وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَةُ হে আলি! প্রথম দৃষ্টির পর দ্বিতীয় দৃষ্টি করো না। প্রথমটি তোমার জন্য ক্ষমাযোগ্য, কিন্তু দ্বিতীয়টি নয়। (সুনানু আবি দাউদ:২১৪৯) প্রথম দৃষ্টি ক্ষমাযোগ্য কেন? প্রথম দৃষ্টি বলতে বোঝানো হয়েছে, অসাবধানতাবশত হঠাৎ হারাম (যেমন: পরনারী বা অশ্লীল কিছু) দেখার ঘটনা। অনেক সময় আমরা ইচ্ছা না করেও এমন কিছু দেখে ফেলি, যা দেখা উচিত নয়। এই ধরনের হঠাৎ দৃষ্টি আল্লাহ ক্ষমা করে দেন যদি দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া হয়।আল্লাহ তাআলা বলেন, মুমিনদের বলো, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে। (সুরা নুর:৩০)
দ্বিতীয় দৃষ্টি গুনাহ কেন?
দ্বিতীয় দৃষ্টি মানে: ইচ্ছাকৃতভাবে আবার তাকানো, মনে মনে উপভোগ করার জন্য বা কুপ্রবৃত্তিকে জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে দেখার চেষ্টা করা। এটি স্পষ্টভাবে গুনাহ এবং চোখের ব্যভিচার (زِنَا الْعَيْنِ) হিসেবে বিবেচিত। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি। (সহিহ মুসলিম:২৬৫৭)
সুতরাং, কেউ যদি দ্বিতীয়বার ইচ্ছাকৃত তাকায়, তবে সে চোখ দিয়ে গুনাহ করছে, এবং এ থেকে বড় গুনাহের (যেমন: হস্তমৈথুন, ব্যভিচার) রাস্তা খুলে যেতে পারে।
এই হাদিস যুবকদের জন্য বিশেষ বার্তা
যেহেতু যুবক বয়সে প্রবৃত্তি ও কু-আকাঙ্ক্ষা বেশি তীব্র, তাই রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হজরত আলি রা.-এর মতো যুবক সাহাবিকেও বিশেষভাবে এই নির্দেশ দিয়েছেন। দৃষ্টি সংযত না থাকলে মনের ভেতর অশ্লীল চিন্তা গজায়, যা ধীরে ধীরে কাজে পরিণত হয়।
এই হাদিস আমাদের শিখায় চোখই গুনাহের প্রথম দরজা। হঠাৎ দেখা মাফ, কিন্তু তাকিয়ে থাকলে বা আবার তাকালে, সেই দৃষ্টিই হবে তোমার ধ্বংসের কারণ। সুতরাং, হারাম দৃশ্য হঠাৎ চোখে পড়লে সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিতে হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বিতীয়বার তাকানো সম্পূর্ণ গুনাহ। যারা দৃষ্টি হেফাজত করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে পবিত্র করেন।চোখের সংযমই যুবকদের চরিত্র রক্ষার প্রথম শর্ত।
কেন চোখের গুনাহ সবচেয়ে বিপজ্জনক?
সহজে হয় আজকাল চোখে পড়া খুবই সহজ, মোবাইল খুললেই হারাম দৃশ্য যা অন্যরা টের পায় না,এটা গোপন গুনাহ, মানুষ জানে না, কিন্তু আল্লাহ জানেন, তীব্র প্রভাব ফেলে হারাম দৃশ্য দেখে হস্তমৈথুন,ব্যভিচার, প্রেমে লিপ্ত হওয়া শুরু হয়, দিল (হৃদয়) কলুষিত হয় চোখের গুনাহ হৃদয়ে কালো দাগ ফেলে, ইবাদতে অনাগ্রহ সৃষ্টি করে।
চোখ হেফাজতের উপকারিতা
১. ইবাদতে মন বসে ২. লজ্জাশীলতা বৃদ্ধি পায় ৩. আল্লাহর ভয় অন্তরে জায়গা করে নেয় ৪. দৃষ্টি ও অন্তর উভয় শুদ্ধ হয় ৫. ব্যভিচার ও বড় গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয় ৬.তাকওয়া অর্জনের পথ প্রশস্ত হয়
চোখের গুনাহ থেকে বাঁচার দশটি করণীয়
১. নিয়মিত কুরআন ও জিকিরে মগ্ন থাকা ২. স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে কড়াকড়ি বিধান রাখা ৩. হারাম বিজ্ঞাপন, মুভি, মডেলিং সব এড়িয়ে চলা ৪. পর্দা ও লজ্জাশীলতা অবলম্বন করা ৫. প্রথম দৃষ্টিতেই চোখ ফিরিয়ে নেওয়া ৬. বিয়ের মাধ্যমে হালাল রাস্তায় যাওয়া (যুবকদের জন্য)৭. নফল রোজা রাখা (যুবকদের জন্য রসুলের সুন্নাহ) হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে সে যেন বিবাহ করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে, এটি তার জন্য ঢালস্বরূপ। (সহিহ বুখারি:৫০৬৬)
৮. ফালতু ফাঁকা সময় দূর করা, ব্যস্ততা সৃষ্টি করা ৯. বিছানায় শুয়ে মোবাইল চালানো বন্ধ করা ১০. আল্লাহর ভয় অন্তরে প্রতিষ্ঠিত করা
বর্তমান যুগে যদি কোনো গুনাহ যুবকদের ইমান, চরিত্র ও ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দিচ্ছে,তাহলে তা হলো চোখের গুনাহ। এটিই ব্যভিচারের প্রথম ধাপ, এটিই ইবাদতের রূহ কেটে দেয়, এটিই হারাম পথে ঠেলে দেয়। তাই যার চোখ হেফাজত থাকবে, তার দিল থাকবে পরিষ্কার। চোখ বাঁচলেই যুবক সমাজ অনেক বড় গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে।