কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের কলাতলী মেম্বারের ঘাটা। সরেজমিনে দেখা যায়, এখানে ফেলা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘর-বাড়ি কিংবা নানা স্থাপনার অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য। আর নালা-নর্দমা দিয়ে পানির ঢল এসে অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য ও ময়লা-আর্বজনা যা মিশছে বঙ্গোপসাগরে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান আহমেদ বলেন, কলাতলী মেম্বারের ঘাটা যেন ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এই স্থান দিয়ে অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য কিংবা ময়লা-আবর্জনা সরাসরি গিয়ে পড়ছে সাগরে। আর বর্ষা মৌসুমে পানির ঢল এসে নালা-নর্দমার ময়লা পানিও যাচ্ছে সাগরে। কর্তৃপক্ষ এখানে এসে দেখে যায়, কিন্তু এরপর আর কোনো খবর থাকে না।
মেম্বারের ঘাটা এলাকার এক সবজি বিক্রেতা বলেন, সাগর থেকে ১৫০ ফুট দূরত্ব। যেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ এবং পৌরসভার নালা। এসব ময়লা-আবর্জনা কিংবা ঘর-বাড়ি ও হোটেল রেস্তোরাঁর সব পয়োবর্জ্য গিয়ে পড়ছে সাগরে।
আরও পড়ুন: বালির আদলে কক্সবাজারকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা!
শুধু মেম্বারের ঘাটা নয়; সৈকতের ডিভাইন পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্টসহ একাধিক পয়েন্টে সৃষ্টি হয়েছে খাল। আর এ খাল দিয়ে হোটেল মোটেল জোনের ময়লা পানি সরাসরি চলে যাচ্ছে সাগরে। স্থানীয়দের দাবি, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সৈকতের বালিয়াড়িকে বানিয়েছে নিজেদের ময়লা ফেলার স্থান। আবার অনেকে বালিয়াড়ির নীচ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে ফেলছেন পানি। যেন দেখার কেউ নেই।
সুগন্ধা পয়েন্টের ব্যবসায়ী রহিম উদ্দিন বলেন, হোটেলের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে সৈকতের বালিয়াড়িতে। এসব ময়লা আবর্জনার অর্ধেক নেয় পৌরসভা আর বাকি অর্ধেক খালের মাধ্যমে চলে যায় সাগরে।
একই পয়েন্টের আরেক ব্যবসায়ী সাত্তার বলেন, হোটেলের ময়লা পানি যাচ্ছে সাগরে। অনেক প্রতিষ্ঠান বালিয়াড়ির ভেতর দিয়ে পাইপ বসিয়ে সাগরের বালিয়াড়িতে ফেলছে। আর যে জায়গাতে পানিগুলো পড়ছে ওই জায়গায় কচুক্ষেত কিংবা নানা উপায়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাতের আঁধারে সব ময়লা পানি ছাড়া হয়। যা থেকে খুব বেশি দুর্গন্ধ ছড়ায়।
সৈকতের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই সাগরে নামছেন শতশত পর্যটক। কিন্তু ময়লা পানির দুর্গন্ধের কারণে পর্যটকদের হাঁটাচলা কঠিন হয় পড়েছে। একই সঙ্গে ভ্রমণে এসে বিব্রতবোধ করছেন অনেক পর্যটক।
ডিভাইন পয়েন্ট দিয়ে সমুদ্র সৈকতে নামা পর্যটক রাবেয়া বেগম বলেন, ময়লা-আবর্জনা এবং ময়লা পানির দুর্গন্ধে সাগরে নামা যাচ্ছে না। বালিয়াড়ি দিয়েও বাচ্চাদের নিয়ে হাঁটতে পারছি না। পর্যটন নগরীর এমন অবস্থা আগে দেখিনি।
আরেক পর্যটক ইব্রাহীম আজাদ বলেন, সুন্দর সৈকতের বালিয়াড়িতে এমন একটা ময়লা পরিবেশ খুবই বিব্রতকর লাগে।
এদিকে লাইফ গার্ড কর্মীরা বলছেন, খাল হয়ে পানি পড়ায় সাগরে সৃষ্টি হচ্ছে গর্ত; যাতে দুর্ঘটনায় কবলিত হচ্ছেন পর্যটকরা। আর অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য সাগরে মিশছে যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করছে বলে মনে করছেন সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা। সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র কর্মী মনঞ্জুরুল ইসলাম রাজু বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁর ময়লা পানি সাগরে যাচ্ছে। কিন্তু বালিয়াড়িতে খাল সৃষ্টি হয়ে যা সাগরে পড়ছে। এতে সাগরে গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে, যাতে পর্যটকরা গোসলে নেমে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এটা বন্ধ করা খুবই জরুরি।
আরও পড়ুন: ইমিগ্রেশন জটিলতায় হারাচ্ছে বিদেশি পর্যটক, আকর্ষণে ই-ভিসা চালুর দাবি
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনে পর্যাপ্ত স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) স্থাপন করা হয়নি। তাই প্রতিনিয়ত হোটেল মোটেল রিসোর্ট কিংবা রেস্তোরাঁ যাতে নিয়মকানুনগুলো মেনে চলে এবং প্রশাসন যেন এগুলো তদারকি করে। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে হোটেল মোটেল জোনের অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য সাগরে না যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে।
তবে প্রশাসন জানিয়েছে, এ সমস্যা নিরসনে সবাই একযোগে কাজ করছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম বলেন, এ সমস্যা নিরসনে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পৌরসভা এবং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও কাজ করছে। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও প্রশাসনকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। আর এর বাইরে যারা নির্দেশনা অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এরই মধ্যে সৈকতের ডিভাইন পয়েন্টের বালিয়াড়িতে কৃত্রিম খাল বানানো হলেও তা ভরাট করে দিয়েছে প্রশাসন। আর সাগরে অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য যাওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে একটি রেস্তোরাঁকে।
]]>