ট্রাম্প সংগঠনটিকে ‘অসুস্থ, বিপজ্জনক, উগ্র বাম বিপর্যয়’ এবং ‘বড় সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে বর্ণনা করেন। মার্কিন ডানপন্থি রাজনৈতিক কর্মী এবং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী চার্লি কির্ক হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিনের মাতায় এই ঘোষণা এলো। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
অ্যান্টিফা এক ধরনের গোপন সংগঠন, যাদের কোনো আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব নেই। সদস্যরা সাধারণত কালো পোশাক পরে রাস্তায় নামেন। তারা দাবি করেন, বর্ণবাদ, ডানপন্থি মূল্যবোধ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাই তাদের মূল লক্ষ্য। অনেক সময় তারা আত্মরক্ষার নামে সহিংস কৌশল ব্যবহার করাকে ন্যায্য বলে মনে করেন।
অ্যান্টিফা নিজেদেরকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ব জার্মানি ও ইতালির ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিক অংশ হিসেবে দেখে। যুক্তরাষ্ট্রে এর শেকড় পাওয়া যায় ১৯৮০-এর দশকে বর্ণবাদী স্কিনহেড, ক্লু ক্লাক্স ক্ল্যান (কেকেকে) ও নব্য-নাৎসিদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা অ্যান্টিরেসিস্ট আন্দোলনে।
আরও পড়ুন: কাতারে আর হামলা চালাবে না ইসরাইল, বললেন ট্রাম্প
২০১৭ সালের ১২ আগস্ট ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলের সংঘর্ষের পর অ্যান্টিফা যুক্তরাষ্ট্রে বড় পরিসরে পরিচিতি পায়। সেখানে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষে তাদের উপস্থিতি স্পষ্ট হয়। এরপর থেকে বহু ডানপন্থি সমাবেশ, বিক্ষোভ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অ্যান্টিফার সক্রিয়তা দেখা গেছে।
২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে নব্য-নাৎসিদের এক র্যালিতে অ্যান্টিফা ও বিক্ষোভকারীরা হামলা চালায়। এতে অন্তত ৫ জন ছুরিকাঘাতে আহত হন। ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকল্প-ডানপন্থিদের বিক্ষোভে ইট, পাইপ, হাতুড়ি ও ঘরে তৈরি অগ্নিসংযোগী বস্তু ব্যবহার করে হামলা চালায় অ্যান্টিফা।
২০১৯ সালে অ্যান্টিফা-সদস্য উইলিয়াম ভ্যান স্প্রনসেন ওয়াশিংটনের টাকোমায় মার্কিন অভিবাসন বন্দিশিবিরে প্রোপেন ট্যাঙ্ক দিয়ে হামলার চেষ্টা চালান। পরে গুলিতে তিনি নিহত হন। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই অ্যান্টিফাকে সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী করে আসছেন। তিনি এমনকি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল দাঙ্গার ক্ষেত্রেও অ্যান্টিফাকে দায়ী করেছিলেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় গুলিতে তিন পুলিশ নিহত
তবে তারই সাবেক এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার রে ২০২০ সালে কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, অ্যান্টিফা আসলে একটি আদর্শবাদ যার কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই। সে কারণে আইনগতভাবে এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা জটিল হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যান্টিফার সাংগঠনিক কাঠামো নেই বলে এটিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা কার্যত একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ। তবে কির্ক হত্যাকাণ্ড ও সাম্প্রতিক সহিংসতার পর যুক্তরাষ্ট্রে বাম-ডানপন্থি বিভাজন আরও তীব্র হতে পারে।
]]>