ভোরের শীতল কুয়াশা ভেদ করে হঠাৎই চোখে পড়ে এক রুগ্ন, অসহায়, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে। ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহ নিয়ে তিনি পড়ে ছিলেন গ্রামের রাস্তার পাশে। চারপাশে কৌতূহলী মানুষের ভিড়, কিন্তু কেউ তার পরিচয় জানে না। অপরিচিত সেই মানুষটি যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন নিজের আপন ভুবন থেকে, খুঁজে পাচ্ছিলেন না আপনজনের ঠিকানা।
এ সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছান বড়সলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যার প্রভাষক আহসান হাবীব শিপলু। মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে তিনি অসুস্থ ব্যক্তির কাছে গিয়ে কথা বলেন, যতটুকু সম্ভব নাম-ঠিকানার তথ্য সংগ্রহ করেন এবং একটি ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে।
ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাড়া মেলে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া গ্রাম থেকে খবর আসে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ব্যক্তির নাম নাসির উদ্দিন, পিতা কাশেম সানা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন।
আরও পড়ুন: ছবিতেই বাবাকে খুঁজে ফিরছে ছোট্ট আরাফ
খবর পেয়ে বোন গুরফান ছুটে আসেন চুয়াডাঙ্গায়। দুপুর দেড়টার দিকে তিনি স্বজনদের নিয়ে পৌঁছান আহসান হাবীবের বাড়িতে। তিতুদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কামাল হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে নাসির উদ্দিনকে তার বোনের হাতে তুলে দেন। ভাইকে জড়িয়ে ধরে বোন অঝোরে কাঁদতে থাকেন। উপস্থিত অনেকেই তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
আহসান হাবীব শিপলু বলেন, ‘মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই পাশে দাঁড়িয়েছি। ফেসবুকের মতো মাধ্যম যে এত বড় ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, ‘এটা মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত। শিপলু ভাইয়ের পোস্ট না থাকলে নাসির উদ্দিন হয়তো এখনো রাস্তায় পড়ে থাকতেন।’