ফরিদপুরে ৫ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতেই কৃষকের স্বপ্ন শেষ!

১ সপ্তাহে আগে
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পাঁচ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে পাট, বোরো ধান ও তিলসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

গতকাল সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে শিলা বর্ষণ হয়। ক্ষণিকের শিলাবৃষ্টিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে চাষিদের।

 

সরেজমিনে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের নয়নীপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা-পাকা অবস্থায় থাকা বোরো ধান জমিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জমিতে ধানের শীষ ভেঙে পড়েছে, পাটের চারার মাথা ভেঙ্গে গেছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

 

স্থানীয় চাষি সালাম শেখ বলেন, গতকাল জোহরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হতেই আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির সঙ্গে শিলা পড়তে শুরু করে। ৫ থেকে ৮ মিনিট শিলা পরে। বৃষ্টি থামলে ক্ষেতে গিয়ে দেখি ক্ষেতের পাটের বেশি অংশের মাথা ভেঙ্গে গেছে এবং নুইয়ে পড়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছিলাম। ক্ষেতের ফসলের অধিকাংশ শেষ হয়ে গেছে। এমন ক্ষতি হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই দায়। এখন এই জমিতে অন্য ফসল আবাদেরও সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে হয়ে গেল শিলাবৃষ্টি

 

আরেক চাষি নাজমুল শেখ বলেন, পাঁচ পাকি জমিতে পাট আবাদ করেছিলাম। আবাদে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। সব শেষ হয়ে গেছে। টাকাও গেল ফসলও গেল। এই ফসলের ওপর ভরসা করেই সারা বছরের সংসার খরচ, সন্তানদের পড়ালেখা চলে। ধার দেনা করে আবাদ করেছিলাম, এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না।

 

অপর চাষি আরশাদ মোল্লা বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। গতরাতে চিন্তায় দুই চোখের পাতা এক করতে পারি নাই। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পাট এবং ধানের আবাদ করেছিলাম। আর কিছুদিন পর ধান ঘরে তুলব এমন সময় এমন ক্ষতি হয়ে গেলো! ধানের কিছু অংশ বিক্রি করে দেনা শোধ করতে চেয়েছিলাম আর বাকি অংশ নিজেরা খেয়ে বাঁচতাম, এখন সবই শেষ হয়ে গেলো!

আরও পড়ুন: যশোরে কালবৈশাখী ঝড়ে ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর বোরো ধানের ক্ষতি

 

গৃহবধূ নাজমা আক্তার নিজেই চলে এসেছেন ক্ষেতে, মুখ তার মলিন। কোনো কথাই বলছেন না। শুধু চেয়ে আছেন পাটক্ষেতের দিকে।

 

তিনি জানান, তার গয়না বন্ধক রেখে পাট আবাদ করেছিলেন তার স্বামী। বলেছিল পাট বিক্রি করে সেগুলো ছাড়িয়ে দেবে। গয়না পড়ে থাক এখন কী খেয়ে বাঁচবেন সেই চিন্তায় আছেন তারা।

 

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, বোয়ালমারী উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে ৩০০ হেক্টর জমির পাট আক্রান্ত হয়েছে। তবে পাট ছোট থাকায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। ক্ষতি নিরূপণে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা। দ্রুত ক্ষতির তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

তিনি আরও জানান, চলতি বছর জেলায় ৮৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩১২ মেট্রিক টন। এছাড়া ২৩ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন