ফরিদপুরে প্রভাবশালী গ্রুপের দখলে খাল-কালভার্ট, ক্ষতিগ্রস্ত ৮ হাজার কৃষক

১ দিন আগে
ফরিদপুরে মামুন গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্রিজ-কালভার্টসহ সরকারি খাল দখলের অভিযোগ উঠেছে। এতে পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে চারটি মাঠের দুই হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ৬ গ্রামের প্রায় আট হাজার কৃষক।

জানা যায়, জেলা সদরের শিবরামপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন কয়েক একর জায়গাজুড়ে ‘মামুন গ্রুপ’র একাধিক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।


রোববার (৩ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন একটি ব্রিজের একপাশে সরকারি খাল ভরাট করে প্রতিষ্ঠানটির ক্যান্টিন ও গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করা হয়েছে। এছাড়া পাশের সাহাপাড়ায় একটি কালভার্টের একপাশে বাঁধ দেয়া হয়েছে। যার ফলে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে ঈশানগোপালপুর ও মাচ্চর ইউনিয়নের বাশগাড়ি খাদ, টেংরামারা বিল, আধারমারা বিল, তলাপত্তর বিল নামে চারটি ফসলি মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব মাঠে আবাদকৃত আমন ধান পানিতে তলিয়ে রয়েছে।


এছাড়া ভরাটকৃত ওই অংশে ছোট পরিধির ড্রেনও দেখা যায়। যেটি দিয়ে ধীরগতিতে পানি প্রবাহিত হচ্ছ। এছাড়া তড়িঘড়ি করে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার করতে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটিকে।

আরও পড়ুন: ফিটনেসবিহীন বাসের রেগুলেটর বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে শিশুটি

স্থানীয়রা জানান, চারটি ফসলি মাঠে দুটি ইউনিয়নের শিবরামপুর, সাহাপাড়া, রসুলপুর, রুদ্রপাড়া, সুনাউল্লাহ পাড়া, বাছের কাজীর পাড়া, ফতেহপুরসহ কয়েকটি গ্রামবাসীর ফসলি জমি রয়েছে। এ মাঠে ধান, পাট, তিলসহ নানা ফসলের চাষাবাদ হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে এসব ফসল উৎপাদন প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।


স্থানীয় চাঁদপুর রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আনোয়ার হোসেন ফসলি মাঠ দেখিয়ে বলেন, ‘এই মাঠগুলো ছিল কৃষিবান্ধব মাঠ। এই সময়ে মাঠকে মাঠ আমন ধানের চাষবাদ হতো। মামুন গ্রুপ হওয়ার পর থেকে গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কয়েক বছর আগে শতবর্ষী বাশেরহাট খালটি দখল করেছে। বর্তমানে ধানের চারা ডুবে গিয়েছে, ধান লাগানোর কোনো অবস্থা নেই। বৃষ্টির পানিতে ২ ফুট থেকে ৫ ফুট পানি হয়ে গেছে। আগে বৃষ্টি হলে এ খাল দিয়ে পানি কুমার নদে চলে যেত। কিন্তু খাল ভরে ফেলায় গত কয়েকবছর ধরে আমরা ভুগতেছি। প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ হাজার মণ ধান উৎপাদন কমে গেছে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’


স্থানীয় আক্তার হোসেন সিদ্দিক নামে আরেকজন কৃষক বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে মামুন গ্রুপকে জানিয়ে এলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ বছরে বেশি বৃষ্টি হওয়ায় আমরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’


এদিকে এসব অভিযোগ তুলে রোববার দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে জেলা কৃষক সমিতির উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির তৈরি কালভার্ট অপসারণসহ খাল পুনরুদ্ধার ও  ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। 


তারা বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন কৃষি জমির ক্ষতি করে আসছে। প্রতিবাদ করলে হুমকি-ধমকি দেন। পরে জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগও দেন।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে দর্শক মাতালো এমএ আজিজ গোল্ডকাপ

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ‘বিষয়টি জানা মাত্র এসিল্যান্ডকে তদন্তে পাঠানো হয়েছে। সরকারি খাল দখলের প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


এ বিষয়ে জানতে মামুন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহিন সাহাবুদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি অনেকদিন দেশের বাইরে অবস্থান করছি, আমি এর কিছুই জানি না। যদিও পানি নিষ্কাশনের জন্য আমি প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন করে দিয়েছি। আমি কারও ক্ষতি চাই না।’
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন