ফরিদপুরে ‘দাদার’ হাতে ধর্ষণের শিকার শিশু

১ সপ্তাহে আগে
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মিলাদের শিন্নি দিতে গিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী দেলোয়ার মোল্লা (৫২) নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকেই পরিবারসহ পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত দেলোয়ার মোল্লা।

 

অভিযুক্ত দেলোয়ার মোল্লা ভাঙ্গা উপজেলার নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের হরুপদিয়া গ্রামের মৃত ধলা মোল্লার ছেলে।

 

জানা যায়, গত সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ভাঙ্গা উপজেলার নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের একটি গ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী প্রতিবেশী দেলোয়ার মোল্লার বাড়িতে মিলাদের শিন্নি দিতে যান। এসময় দেলোয়ার মোল্লা ওই শিশুটিকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে শিশুটির মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে বাথরুমে আটকে রাখেন। ওই শিশুটি বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা খোঁজ করতে গেলে দেলোয়ার মোল্লা শিশুটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেন।

 

শিশুটি অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে এসে পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানায়। শিশুর পরিবার দরিদ্র হওয়ায় ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি। তবে পরদিন বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামের মাতবররা সমাধান করে দেবে বলে আশ্বাস দেন এবং শিশুটিকে চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে নিতে বাধা দেন। পরে সংবাদ পেয়ে পুলিশ শিশুটির বাড়িতে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে দেলোয়ার মোল্লাকে আসামি করে ভাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন।

 

আরও পড়ুন: নেত্রকোনায় শিশু ধর্ষণ, ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি

 

ভুক্তভোগী শিশুটি বলে, 

দুপুরে দেলোয়ার দাদার বাড়িতে শিন্নি দিতে গিয়ে দাদিকে ডাক দেই, এসময় দাদি বাড়িতে না থাকায় দেলোয়ার দাদা বলে ঘরের ভেতর আয়। ঘরের ভেতর প্রবেশ করতেই আমাকে কাছে ডেকে নেয়। এক পর্যায়ে আমার উপর অত্যাচার করে বাথরুমে আটকে রাখে। ভয়ভীতি দেখায় কাউকে এ ঘটনা না বলার জন্য। পরে পেছনের দরজা দিয়ে আমাকে বের করে দেয়। বাড়িতে এসে দাদির কাছে সব কথা খুলে বলি।

 

ভুক্তভোগী শিশুটির মা বলেন, ‘দেলোয়ারের বাড়িতে শিন্নি দিতে যায় আমার মেয়ে। অনেক সময় পার হলেও না আসায় আমার দেবরের স্ত্রী ওই বাড়িতে যায়। গিয়ে আমার মেয়ের নাম ধরে ডাকাডাকি করলেও কোনো সারাশব্দ পায় না। কিছু সময় পর দেলোয়ার ঘর থেকে বের হয়ে বলে সে এসেছিল, চলে গেছে। তখন আমার জা বলে ওর সেন্ডেল রয়েছে ঘরের দরজার সামনে, আপনি বলছেন চলে গেছে, এ কথা বলে সে বাড়িতে ফিরে আসে। এরপর দেলোয়ার ঘরে গিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে মেয়েকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়।’

 

তিনি জানান, মেয়ে বাড়িতে এসে ভয়ে আমাকে কিছু বলেনি। বাড়িতে আসার পর পুরো শরীর কাঁপছিল। দাদির কাছে সব কথা খুলে বলে। বিষয়টি জানাজানি না করতে প্রতিবেশীরা ও মাতবররা বলেন। ওই সময় মেয়েকে বাড়িতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেই।

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ওর বাবা কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ভয়ে কাউকে কিছু বলি না। পরদিন বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামের মাতবররা সমাধান করে দেবে বলে আশ্বাস দেন এবং মেয়েকে চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে নিতে বাধা দেন। পরে সংবাদ পেয়ে পুলিশ বাড়িতে এসে মেয়েকে থানায় নিয়ে যায়। আমার মেয়ের উপর যে অত্যাচার হয়েছে তার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাই।’

 

আরও পড়ুন: স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেন কুদ্দুস!

 

শিশুটির বাবা বলেন, 

ঘটনার পর গ্রাম্য মাতবররা আমাকে মামলা করতে নিষেধ করেছিলেন। তারা একটা সমাধান করে দেয়ার কথা বলেছিলেন। ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার দেলোয়ার তার লোকজন এনে একটি স্ট্যাম্পে সই নিতে চেয়েছিলেন, আমি সই না করায় আমার গায়েও হাত তোলেন। পরে পুলিশ গিয়ে মেয়েকে থানায় নিয়ে যায়। এরপর থেকেই দেলোয়ার পরিবারসহ পলাতক রয়েছেন।

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো. আফজাল হোসাঈন জানান, শিশুটির বাবা বাদী হয়ে দেলোয়ার মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।

 

তিনি আরও জানান, ঘটনার পর থেকেই দেলোয়ার মোল্লা পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন