ফরাসি লিগে ঝড় তোলা এই আর্জেন্টাইনকে দলে ডাকবেন তো স্ক্যালোনি?

২ সপ্তাহ আগে
চলতি মৌসুমে লিগ ওয়ানের গোলদাতার তালিকার দিকে তাকালে অবাকই হতে হচ্ছে। পিএসজির ব্যালন ডি'অরজয়ী তারকা ওসমান দেম্বেলে, দেজিরে দুয়ে, মার্শেইয়ের ইংলিশ তারকা ম্যাসন গ্রিনউডদের পেছনে ফেলে তালিকার সবার ওপরে বসে আছেন অখ্যাত এক ফুটবলার–হোয়াকিন পানিচেল্লি। লিগে ১০ ম্যাচে ৯ গোল করে সবার ওপরে এই ২৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন। তার পেছনে পড়ে গেছেন গ্রিনউড, সোফিয়ান ডিওপের মতো গোল স্কোরাররা।

২০০২ সালের ৭ অক্টোবর আর্জেন্টিনার কর্দোবা শহরে জন্ম নেওয়া পানিচেল্লির উত্থান ধৈর্য, অধ্যবসায় আর দৃঢ় সংকল্পের অনবদ্য গল্প। স্থানীয় ক্লাব রেসিং দে কর্দোবায় ক্যারিয়ার শুরুর পর বেলগ্রানো ও আতালায়া-তে খেলেছেন তিনি। এরপর ২০২০ সালে যোগ দেন আর্জেন্টিনার বড় ক্লাব রিভার প্লেটে, যেখানে যুবদলে নিজেকে গড়ে তোলেন তিনি।


২০২৩ সালে ইউরোপে পাড়ি জমান পানিচেল্লি, সই করেন ডেপোর্তিভো আলাভেসের সঙ্গে। কিন্তু হঠাৎই হাঁটুর এক মারাত্মক এসিএল চোট তার পথরোধ করে দাঁড়ায়। দীর্ঘ পুনর্বাসনের পর তাকে ধারে খেলতে পাঠানো হয় সেগুন্দা ডিভিশনের ক্লাব মিরান্দেসে। ২০২৪–২৫ মৌসুমে স্পেনের দ্বিতীয় সারির লিগে ২১ গোল করে নজর কাড়েন ফরাসি লিগের দল স্ট্রাসবুর্গের।


২০২৫ সালের জুলাইয়ে স্ট্রাসবুর্গ সাহসী এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৬.৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে তাকে দলে ভিড়ায় এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত চুক্তি করে। ক্লাবটা যে পানির দামে সোনা পেয়ে গেছে তা কয়েক মাসের মধ্যেই প্রমাণ করে দিয়েছেন পানিচেল্লি। এখন তিনি দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং লিগ ১–এর সবচেয়ে বড় চমকগুলোর একটি।

 

আরও পড়ুন: ১৪৬ কোটি টাকার বিনিময়ে অ্যাঙ্গোলায় সফরে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা


১.৯০ মিটার লম্বা পানিচেল্লি একেবারে ক্লাসিক 'নম্বর ৯', কিন্তু খেলায় আছে আধুনিকতার ছোঁয়া। শক্তিশালী, টেকনিক্যালি দক্ষ এবং গোলের সামনে শান্ত স্বভাবের এই ফরোয়ার্ড বুদ্ধিদীপ্তভাবে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দেন, দুই পায়ে সমান দক্ষতায় ফিনিশ করেন, এবং মাঠে প্রমাণ রাখেন পরিণত ঠান্ডা মাথার। এই মৌসুমে তার গড় ম্যাচ রেটিং ৭.৪ — যা তার ধারাবাহিকতা ও দলের জন্য গুরুত্ব দুটোই প্রমাণ করে।


 

দুর্দান্ত এক স্ট্রাইকার পানিচেল্লি। কিছুদিন আগে বাইসাইকেল কিকে গোল কড়ে মুগ্ধ করেছেন ফুটবলপ্রেমীদের। ছবি: রয়টার্স


তার অসাধারণ পারফরম্যান্সে স্ট্রাসবুর্গ এখন ১৯ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের চতুর্থ স্থানে, যা তাদের ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় ফেরার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। পিএসজি, লিওঁ আর মোনাকোর মতো ক্লাবদের আধিপত্যের মধ্যে পানিচেল্লির হাত ধরে স্ট্রাসবুর্গের এই উত্থান সত্যিই বিস্ময়কর।


আর পানিচেল্লির দারুণ পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি ইউরোপের জায়ান্টদের। ইতালির সিরি আ এবং ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগের বেশ কিছু ক্লাব এর মধ্যেই তার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছে। বাজারমূল্য বেড়ে চলেছে দ্রুত, আর পানিচেল্লি নিজে দেখছেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন।


স্বপ্নপূরণ থেকে খুব বেশি দূরে নেই পানিচেল্লি। নভেম্বরে আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের আসন্ন সফরে স্ক্যালোনি দলে বেশ কয়েকজন নতুন মুখকে ডাকতে পারেন। স্পেনে মূল ঘাঁটি গাড়লেও স্ক্যালোনির দল ১৪ নভেম্বর লুয়ান্ডায় অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে। আর এই প্রীতি ম্যাচেই কপাল খুলতে পারে পানিচেল্লির। ফ্রান্সে দারুণ ফর্মে থাকা এই ২৩ বছর বয়সী আশা করছেন স্ক্যালোনি তাকে এবারই দলে ডাকবেন।


 

পানিচেল্লির দারুণ নৈপুণ্যে উড়ছে তার দল স্ট্রাসবুর্গ। ছবি: রয়টার্স


পানিচেল্লি বলেন, 'আমি এখন ভালো ফর্মে আছি। জাতীয় দলের হয়ে খেলা প্রতিটি ফুটবলারের স্বপ্ন, বিশেষ করে একজন আর্জেন্টাইনের জন্য। এটা জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হতে পারে।'

 

আরও পড়ুন: ৪৮ দিন পর মাঠে নেমে কেমন খেললেন নেইমার


জেনারেশন এফ নামের এই অনুষ্ঠানে যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না?–পানিচেল্লি সোজাসাপটা বলেন, 'এই মুহূর্তে না। তবে আশা করি তারা আমাকে দেখছেন। আমি বিষয়টা নিয়ে বেশি ভাবি না, বরং প্রতিদিনের অনুশীলন ও খেলায় মনোযোগ দিই।'

 

আর্জেন্টিনার জায়ান্ট ক্লাব রিভারপ্লেটে উত্থান শুরু হয় পানিচেল্লির। ছবি: এক্স


২৩ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার ভালোমতোই জানেন, বর্তমানে ইউরোপে আলোচনায় থাকা অন্যতম আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় তিনিই। আর যদি তিনি ফরাসি লিগ ও কনফারেন্স লিগে এভাবেই গোল করতে থাকেন (দিনকয়েক আগেই জাগিয়েলোনিয়া বিয়ালিস্টকের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্রয়ের ম্যাচে দারুণ সাইকেল কিকে গোল করেছিলেন), তবে সিনিয়র দলে ডাক পাওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা।


তবে, তিনি এটাও বুঝতে পারছেন যে বর্তমানে জাতীয় দলের 'স্ট্রাইকার' পজিশনে লাউতারো মার্তিনেজ ও হুলিয়ান আলভারেজের পরে তৃতীয় নম্বর হিসেবে আছেন হোসে ম্যানুয়েল লোপেজ। ব্রাজিলের পালমেইরাসের এই ফরোয়ার্ড দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। ৫৫ ম্যাচে ২৩ গোল করা এই স্ট্রাইকার কোপা লিবার্তাদোরেসে সর্বোচ্চ গোলদাতা (৭ গোল) এবং সাম্প্রতিক পুয়ের্তো রিকোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন। ফলে স্ক্যালোনির বিশ্বকাপ ভাবনায় জায়গা পেতে অভাবনীয় কিছুই করতে হবে তাকে।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন