মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা এগারোটা থেকে বারোটা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী কাশীপুর ইউনিয়নের চর কাশীপুর এলাকার কামালবাজারে বিক্ষুব্ধ জনগণ মানববন্ধন করেন।
অভিযুক্ত সাইদুর রহমান নায়ায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পদেও ছিলেন।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, সাইদুর রহমান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের দোসর ছিলেন এবং সরকার দলীয় নানা সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। সরকার পতনের পর থেকে তিনি রাতারাতি বিএনপির রাজনীতির পরিচয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন। সাইদুর মূলত একজন ভূমিদস্যু ও চিহ্নিত প্রতারক। নিজের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য চর কাশীপুর এলাকার নাম পরিবর্তন করে অন্য নাম রাখতে অপচেষ্টা করছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র, দলিলদস্তাবেজ ও ইউনিয়ন পরিষদের খাতাপত্রে এলাকাটি চর কাশীপুর হিসেবে লিপিবদ্ধ হলেও সাইদুর হঠাৎ করে এলাকাটির নাম পরিবর্তন করতে নানাভাবে অপচেষ্টা করছে।
এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, এলাকার নাম পরিবর্তনের হীন ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাতে সাইদুর মসজিদকেও ব্যবহার করছে। তবে তার এই ষড়যন্ত্র এলাকাবাসী কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এলাকাবাসী দাবি করেন, এই এলাকার নাম চর কাশীপুর ছিল। এখন পর্যন্ত কাগজে কলমে এই নামেই আছে এবং এই নামই বহাল থাকবে। সাইদুর গংয়ের এই ষড়যন্ত্র যে কোন মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন এলাকাবাসী। একই সঙ্গে সাইদুরকে এলাকা থেকে অবাঞ্চিতও ঘোষণা করেন তারা।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ নারী পুরুষ ঝাড়ু হাতে নিয়ে মিছিল করে বিভিন্ন পাড়া মহল্লা প্রদক্ষিণ করেন এবং সাইদুরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের শ্লোগান দেন।
আরও পড়ুন: কলেজছাত্রী ও বাবাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের অভিযোগ, ছাত্রদলের ২ নেতা বহিষ্কার
মানববন্ধনে স্থানীয় পঞ্চায়েতের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন- চর কাশীপুর এলাকার জামাল মাদবর, জাহেদ হালদার, আল আমিন মাদবর, বিল্লাল মাদবর, দেলোয়ার হোসেন মাদবর, গিয়াস উদ্দিন, আবুল বাশার, আক্তার হোসেন, তালেব আলী মাদবর, নাসিরউদ্দিন পিন্টু প্রমুখ।
অভিযুক্ত সাইদুর রহমান কাশীপুর ইউনিয়নের নরসিংপুর এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে। সাইদুরের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় আসামি হওয়া সত্ত্বেও সাইদুর প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নানা অপতৎপরতা করছে বলেও মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন।
এ বিষয় জানতে বিকেলে চারটায় মুঠোফোনে কথা হয় সাইদুর রহমানের সঙ্গে। অভিযোগ অস্বীকার করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।
সাইদুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে এবং আমার রাজনৈতিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করতে এলাকার স্বার্থান্বেষী কিছু ব্যক্তির ইন্ধনে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি আওয়ামী লীগের দোসর ছিলাম এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং আওয়ামী লীগের আমলে আমি ছাত্রদলের রাজনীতি করে ২০০৮ সাল থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর নির্যাতিত হয়েছি। ১৭ টি মামলায় আসামি হয়ে জেল খেটেছি। হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছি।’
ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর আমরা ছাত্রদল, যুবদল ও মূল দলের নেতাকর্মীরা মিলে এলাকা গুছানোর কাজ শুরু করি। এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিই। এ কারণে আমি সেই স্বার্থান্বেষী মহলের শত্রুতে পরিণত হয়েছি। তারা আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার করছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’