নবীজির সুন্নত পালন করা আমাদের কর্তব্য। সর্বপ্রথম দিনের শুরুতেই ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোই একজন মুমিনের অন্যতম গুণ। এ কাজে হযরত মুহাম্মদ সা.-এর শেখানো তাসবিহ ও দোয়া পড়া সবচেয়ে উত্তম।
সকালের দোয়া সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত আছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ সা. ভোরে উপনীত হলে বলতেন, ‘আসবাহনা ওয়া আসবাহাল হামদু কুল্লুহু লিল্লাহ, লা শারিকা লাহু, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া ইলাইহিন নুশুর।’
আরও পড়ুন: রাতে ঘুম না এলে যে আমল করবেন
অর্থ: আমরা ভোরে উপনীত হয়েছি এবং আল্লাহর রাজত্ব (সৃষ্টিকুল) ভোরে উপনীত হয়েছে। সব প্রশংসা মহান আল্লাহর। তার কোনো শরিক নেই। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই এবং পুনরুত্থান তার কাছেই।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আরেক হাদিসে বর্ণনা করেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে ১০০ বার এবং সন্ধ্যায় ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ পড়বে, কিয়ামতের দিন তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কিছু কেউ নিয়ে আসতে পারবে না। তবে সে ব্যক্তি ছাড়া যে তার মতো বলবে বা তার চেয়ে বেশি আমল করবে।’ (মুসলিম, হাদিস ২৬৯২)
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’-এর অর্থ হলো, ‘আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।
অতএব আমাদের উচিত মহান আল্লাহর প্রশংসা করা এবং যাবতীয় অনিষ্টতা ও অকল্যাণ থেকে মুক্তি চেয়ে দিন শুরু করা।
এছাড়াও ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে দিন শুরু করতে বলেছেন প্রিয় নবী। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ে। তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকির করে। তারপর দুই রাকাত নামাজ পড়ে। সেই ব্যক্তির একটি হজ ও একটি উমরার সাওয়াব লাভ হয়। (তিরমজি ৫৮৬)
কোরআন তেলাওয়াত সর্বোত্তম জিকির। সুরা ইয়াসিন কোরআনের রূহ। সুতরাং দিনের শুরুটা যদি সুরা ইয়াসিন দিয়ে করা হয় তাহলে তা অবশ্যই বরকতপূর্ণ হবে। এজন্য বিশিষ্ট তাবিঈ ইয়াহইয়া ইবন কাসির (রহ.) বলেন,
যে ব্যক্তি সকালে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে। তিনি আরো বলেন, আমাকে এ বিষয়টি এমন এক ব্যক্তি বলেছেন, যিনি এর বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। (বর্ণনাকারী ইবন যুরাইস, ফাজায়েলুল কুরআন পৃষ্ঠা ১০১)
এছাড়াও আরো অনেকগুলো আমলের কথা হাদিসে আছে, হজরত আবদুল্লাহ বিন খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সা. তাকে বলেছেন, ‘তুমি যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে কিংবা সকালে উপনীত হবে তখন তুমি ‘সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস ৩ বার পড়বে। এটি তোমাকে সব কিছু থেকে রক্ষা করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৭৫, আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৮২)
হজরত উসমান বিন আফ্ফান (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সা.-কে বলতে শুনেছি, প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় এই দোয়াটি তিনবার পড়লে আর কোনো ধরণের ক্ষতি হবে এমনটি হতে পারে না। (আবু দাউদ:৫০৯০,তিরমিজি: ৩৩৮৮,ইবনে মাজাহ:৩৮৬৯)
বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়া দুররু মাসমিহি শাইয়ূন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম। অর্থ: আমি আমার দিন বা রাতের সূচনা করছি ওই আল্লাহর নামে যার নামের সঙ্গে আসমান জমিনের কোনো কিছু কোনো ধরণের ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বাজ্ঞ। (সুনানে আবু দাউদ: হাদিস, ৫০৮৮)
আরো পড়ুন: রাতে যেসব আমলে মহাসওয়াব
হজরত আবুদ দারদা রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় ৭ বার নিম্নোক্ত দোয়া পড়বেন আল্লাহ তায়ালা বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন।
حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ উচ্চারণ: হাসবিয়া আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আযিম।
অর্থ: আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তার উপরই আমি তাওয়াক্কুল করি। তিনি মহান আরশের অধিপতি) আল্লাহ্ তার দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮১)
আরও কিছু আমল
১. দরুদ শরিফ ১০ বার, ফজর ও মাগরিবের পর। কেয়ামতের দিন রাসুল (সা.)-এর শাফা'আত লাভ করবে।
২. (‘রাদ্বীতু বিল্লাহি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলামি দ্বীনা, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা’) ৩ বার, ফজর ও মাগরিবের পর। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ উক্ত ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করবেন।
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার বলে, (সুব্হানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি) তার পাপসমূহ মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে।
(বুখারি ৭/১৬৮, নং-৬৪০৫; মুসলিম ৪/২০৭১, নং-২৬৯১)