প্রসূতির পেটে ১৮ ইঞ্চি কাপড় রেখেই সেলাই!

৪ সপ্তাহ আগে
নরসিংদীতে এক প্রসূতির অস্ত্রোপচারের সময় পেটের ভেতরে ১৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের একটি রক্ত পরিষ্কার করার কাপড় রেখে সেলাই করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত চিকিৎসক নরসিংদী সিটি হাসপাতালের শিউলী আক্তার। ভুক্তভোগী লিমা আক্তার (২৮) বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই নরসিংদীর সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেছেন।


লিমা আক্তার নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের দত্তেরগাঁও মির্জাকান্দি এলাকার রহিম মিয়ার স্ত্রী।


অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লিমা আক্তারের প্রসব ব্যথা ওঠায় গত ১৭ জুন নরসিংদীর বাসাইল এলাকায়  অবস্থিত নরসিংদী সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেলে তাকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. শিউলি আক্তার। এ সময় লিমা এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।


এরপর ২১ জুন দুপুরে লিমা আক্তারকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। বাড়ি ফেরার পর তিনি পেটে  তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। এ বিষয়টি নিয়ে সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভুক্তভোগী নারীর ভাই জহিরুল ইসলাম।


আরও পড়ুন: নার্সদের দিয়ে প্রসব করানোর চেষ্টা, নবজাতকের মৃত্যু, আটক ২


এ অবস্থায় ফের ভুক্তভোগী নারীকে ২৫ জুলাই পুনরায় একই হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে সেখানে কিছু ধরা পড়েনি, পরে তাকে নরসিংদীর আরেকটি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক দ্রুত তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন এবং তার পেটে একটা কিছু রয়েছে বলে জানান। সে অনুযায়ী স্বজনরা রোগীকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান এবং নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। সেখানে পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানকার চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হন তার পেটে রক্ত পরিষ্কার করার ‘মব’ টুকরো রয়েছে, দ্রুতই অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানান।


গত ৩ জুলাই গভীর রাতে চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এইচ এম শাখাওয়াত হোসেন দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে ওই নারীর পেট থেকে ১৮ ইঞ্চির একটি ‘মব’  কাপড়ের টুকরো বের করেন। বর্তমানে ভুক্তভোগী একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


ভুক্তভোগী নারীর বড় ভাই জহিরুল ইসলাম জানান, সিজার অস্ত্রোপচার করে এখন আমার বোন মৃত্যু পদযাত্রী। পেটে ইনফেকশন হয়ে গেছে, এখনো পেট ফুলে আছে, দুর্গন্ধ বের হয়, ব্যথায় প্রতিনিয়ত কাতরাচ্ছে সে। দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে মিলিয়ে ৫ দিন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়েছে। এখনো সে সংকটাপন্ন। শিশুটিও মায়ের সেবা এবং বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত, ঝুঁকিতে আছে শিশুটিও। এ অবস্থায় মানসিক ও আর্থিকভাবে পুরো পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।


আরও পড়ুন: নজরুল ইসলাম মেডিকেলে জনবল সংকট, সেবা নিয়ে শঙ্কিত রোগীরা


তিনিও আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেছি। বিএমডিসিতে অভিযোগ করবো এবং পারিবারিক সিদ্ধান্তে মামলায় দায়ের করবো। আমরা এরকম জঘন্যতম চিকিৎসার প্রতিকার চেয়ে বিচার চাই।’


নরসিংদী সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়া জানান, বিষয়টি আমরা জানার পর খোঁজ-খবর নিয়েছি। রোগীর বাড়িতেও গিয়েছি। দেড় লাখ টাকায় সমঝোতা করার চেষ্টা করেছি। তারা আরও অনেক বেশি টাকা চায়। ভুল করে বিষয়টি হয়ে গেছে, সেটিতো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আমরা রোগীর চিকিৎসার দায়িত্বও নেয়ার কথা বলেছি।


এ বিষয়ে নরসিংদীর সিভিল সার্জন  সৈয়দ মো. আমিরুল হক বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ রকম ভুল হতে পারে না। শুনেছি রোগী সংকটাপন্ন। রোগীর জীবন বিপন্ন করে তুলে এতো বড় ময়লা পরিষ্কার করার কাপড় পেটে রেখে সেলাই করে ফেলেন কীভাবে? এর প্রতিকার দরকার। আমরা এই ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন