আয়ানের বাবার নাম সানি শেখ (২৮)। তিনি ধুলদী জয়পুর ঘষিরডাঙ্গি গ্রামের মজিদ শেখের ছেলে।
জানা গেছে, অনাগত সন্তানকে এক মাসের গর্ভে রেখে ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি সৌদি আরব পাড়ি জমান সানি শেখ। সেখানে দাম্মাম শহরে একটি প্রতিষ্ঠানে খাবার ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করতেন তিনি। গত ৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত ১০ টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে খাবার ডেলিভারির উদ্দেশ্যে বের হন সানি। পথে দ্রুতগতির বেপরোয়া একটি প্রাইভেটকার চাপা দেয় তাকে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
আরও পড়ুন: রাজবাড়ীতে আগুনে পুড়ল জামায়াতের কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি দোকান
গতকাল ১৮ সেপ্টেম্বর তার মরদেহ নিজ বাড়িতে এলে স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। সানির সেই অনাগত সন্তান আয়নের বয়স এখন এক বছর।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে প্রথমবারের মতো দেখা হলো বাবা-ছেলের। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস; দু’জনের কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি, পারেনি আদরের ছোঁয়া দিতে।
পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কান্না আর আহাজারিতে আয়ানও শেষ বিদায় দিয়েছে বাবাকে। কে জানে, বাবাকে বলার জন্য কতশত কথা জমে আছে ছোট্ট আয়ানের মনে? কিন্তু সেই কথাগুলো আর কোনদিনও বলা হবে না তার। বাবা ডাকার আক্ষেপটাও থেকে যাবে তার সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে।
অন্যদিকে, বাবাকে হারিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে সানির ৪ বছর বয়সী মেয়ে সিনথিয়া। স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় স্ত্রী আছিয়া বেগম । বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন মা আনোয়ারা বেগম। আদরের একমাত্র ভাইকে হারিয়ে দুই বোনের আহাজারি কাঁদিয়েছে উপস্থিত সকলকেই। সানিকে শেষ বিদায় জানাতে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ।
আরও পড়ুন: রাজবাড়ীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মেম্বারদের অনাস্থা
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সানিকে। শেষ হয় এক রেমিট্যান্স যোদ্ধার সংগ্রামী জীবনের অধ্যায়।
শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিউদ্দিন আহমেদ কাশেম বলেন, সানি খুব ভালো ছেলে ছিল। দুটি শিশু বাচ্চা রেখে প্রবাসের মাটিতে তিনি মারা গেলেন। এতে পরিবারটির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
]]>