প্রতিদিন তৈরি ৪ হাজার টন বর্জ্য, তবুও কেন থমকে ‘বর্জ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প’?

৩ সপ্তাহ আগে
ঢাকা শহরে প্রতিদিন উৎপন্ন হচ্ছে হাজার হাজার টন বর্জ্য। কিন্তু সেই বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করে বিদ্যুৎ বা জৈবসার তৈরির যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, তা এখনো কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। অচল পড়ে আছে কোটি টাকার প্রকল্প। সিটি করপোরেশন বলছে, অচিরেই বাস্তবায়ন হবে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের কাজ। আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালাকে বাস্তবে রূপ দেয়ায় জোর বিশেষজ্ঞদের।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আমিন বাজার ল্যাডফিল্ডের ময়লার স্তূপ। বর্জ্যের পাহাড়ে ট্রাক থেকে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। চারদিকে ধোঁয়া, দুর্গন্ধ আরও বর্জ্যের ওপর ঘুরছে পাখি। এর সামনেই রয়েছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাওয়ার প্ল্যান্ট।

 

যেখান থেকে সাড়ে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসেই। যার জন্য দরকার ছিল প্রতিদিন ৩ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য। কিন্তু এখন প্রতিদিন ৪ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য তৈরি হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের দেখা নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকেই বন্ধ রয়েছে এই পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ।

 

দেশে প্রতিদিন শুধু শহর এলাকায় তৈরি হয় ৪৭ হাজার টন বর্জ্য। যার মধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে তৈরি হয় প্রায় ৮ হাজার টন। যে বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা গেলে, তা হয়ে উঠতে পারে সম্পদ। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০২৩ সালে চীনা কোম্পানি সিএমইসির কাছে ৩০ একর জমি হস্তান্তর করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। শুরু হয় কাজ। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর থেমে আছে প্রকল্পটি।

 

আরও পড়ুন: দেশে বছরে উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি অপচয় হচ্ছে

 

বর্জ্য পোড়াতে সিএমইসির সঙ্গে চুক্তিতে তাপমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৮০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অথচ ২০২১ সালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় তা ছিল ১ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তাপমাত্রার এই তারতম্যের কারণেই কাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক এ বি এম সামসুল আলম। তিনি বলেন, এই দেড়শ ডিগ্রির বিষয়টি এখনও অমিমাংসিত রয়েছে। ইস্যুটি সমাধান হয়ে গেলেই আগামী দুই বছরের মধ্যে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।

 

অন্যদিকে, থমকে আছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য থেকে সার তৈরির প্রকল্পও। তবে সংস্থার প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার বলছেন, শুধু সার নয়; বর্জ্য থেকে বেশ কিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যা আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যেই বাস্তবায়ন হবে।

 

তিনি বলেন, মিথেন গ্যাস উত্তোলন করে কোরিয়ান কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনে ব্যবহার করা যাবে। কয়লার সাবস্টিটিউট হিসেবে বর্জ্য থেকে ছোট ছোট কোলের মতো বের হবে। এছাড়া সবজির বর্জ্য থেকে তৈরি কার হবে জৈব সার। আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে বর্জ্য একটি সম্পদে পরিণত হয়ে আশার আলো দেখাবে।

 

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালাকে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবে রূপ দেয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ওয়েস্ট কনসার্নের পরিচালক ইফতেখার এনায়েতউল্লাহ বলেন, বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে হলে প্রথমে জৈব ও অজৈব বর্জ্যকে পৃথক করতে হবে। এটা বিধিমালায় বলা রয়েছে। এখানে ওয়েস্ট টু এনার্জি, বায়োগ্যাস তৈরি করা যেতে পারে। নীতিমালার প্রয়োগ ঘটাতে পারলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ৭৫ শতাংশই সমাধান হয়ে যাবে।

 

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি কিংবা সার উৎপাদন সম্ভব হলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে, অন্যদিকে কমবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন