প্রচণ্ড শীতে মোজার উপর মাসেহ করা যাবে?

৫ দিন আগে
দেশে প্রচণ্ড শীত পড়ছে। শীতের সময় শীত নিবারণের জন্য মানুষ হাতে ও পায়ে মোজা পরে থাকে। ইসলামি শরিয়ত মানুষকে শীত থেকে বাঁচার জন্য স্বতন্ত্র ও সহজ কিছু বিধান দিয়েছে। আর তা হলো, অজুর ক্ষেত্রে পা না ধুয়ে মোজার ওপর মাসেহ করা। আজ কথা বলবো মোজার উপর কীভাবে মাসেহ করবেন। কোন মোজা ব্যবহার করবেন।

শীতে কষ্ট কমানোর জন্য, অজু সহজ করতে পা ধোয়ার বিকল্প হিসেবে মোজার ওপর মাসেহ করার অনুমতি দিয়েছে শরিয়ত। তবে এ ক্ষেত্রে অজু করে চামড়ার মোজা পরতে হবে। সুতার মোজা বা এমন মোজা যেগুলো পরিধানে পায়ে পানি পৌঁছে, এমন কোনো মোজার উপর মাসেহ করা যাবে না।

 

‘মুসাফির’ (শরিয়তে মুসাফির বলা হয়, যে ৪৮ মাইল, প্রায় ৭৮ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করে, ভ্রমণরত) ব্যক্তি তিন দিন তিন রাত (৭২ ঘণ্টা) পর্যন্ত মাসেহ করে যেতে পারবেন। ‘মুকিম’ (নিজ ঘরে অবস্থানরত) ব্যক্তি এক দিন এক রাত (২৪ ঘণ্টা) মোজার উপর মাসেহ করতে পারবেন।

 

আরও পড়ুন: নবীজির উপর দরুদ পাঠের ৯ ফজিলত

 

এ প্রসঙ্গে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হযরত রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘মোজার ওপর মাসেহ করার সময় মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত।’ (আবু দাউদ)

 

মোজার উপর মাসেহ বৈধ হওয়ার শর্তসমূহ

 

শর্তগুলো পাওয়া গেলেই মোজার ওপর মাসেহ বৈধ হবে। শর্তগুলো হলো ১. পাক পবিত্র হয়ে মোজা পরা। অর্থাৎ অজু করে পা ধোয়ার পর মোজা পরিধান করতে হবে। (বোখারি ১৯৯) ২. মোজা দিয়ে টাখনু ঢেকে থাকা। (মুসলিম ৩৫৪) এমন মোজা পরিধান করা যেটা দিয়ে টাখনু ঢেকে থাকে। টাখনুর নিচে থাকে এমন মোজা পরিধান করে মাসেহ করলে মাসেহ হবে না।

 

৩. মোজা ছেঁড়াফাটা হলে পায়ের ছোট আঙুলের তিন আঙুল পরিমাণের কম ছেঁড়াফাটা থাকতে হবে। (আবু দাউদ ২৪২০) ৪. উভয় মোজা বাঁধা ছাড়া পায়ে লেগে থাকা। ৬. তা ধারাবাহিক চলার উপযোগী হওয়া। সুতরাং আমাদের দেশে প্রচলিত সুতার মোজার ওপর মাসেহ বৈধ নয়।


মোজর ওপর মাসেহের ফরজ ও সুন্নতসমূহ

 

মাসেহের ফরজ সীমারেখা কতটুকু হবে? হাতের ছোট তিন আঙুলের সমান পায়ের ওপরের অংশ মাসেহ করা। (আবু দাউদ ১৪০) মাসেহের সুন্নত পদ্ধতি হলো পায়ের আঙুলের মাথা থেকে হাতের আঙুলগুলো প্রশস্ত করে টাখনু পর্যন্ত মাসেহ করা। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/১৮৫) 

 

মোজা মাসেহের নির্ধারিত মেয়াদ, সময় সীমা হলো মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত। (আবু দাউদ ১৩৫) মুকিম যদি মাসেহ করার পর সফর আরম্ভ করে, তবে মুসাফিরের সময়সীমা পরিপূর্ণ করবে, তদ্রূপ মুসাফির যদি মাসেহ করার পর মুকিম হয়ে যায়, তবে মুকিমের নির্ধারিত মেয়াদ পূরণ করবে। (আবু দাউদ ১৩৫)

 

যে-সব কারণে মোজার উপর মাসেহ ভেঙে যায়

 

১. যে-সব কারণে অজু ভেঙে যায়, সেসব কারণে মাসেহও ভেঙে যায়। (তিরমিজি ৬৯) ২. মোজা খোলার কারণে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি ১৪২২) ৩. মোজা যদি পায়ের টাখনুসহ বেশিরভাগ অংশ বের হয়ে যায়, তখনও মাসেহ ভেঙে যাবে। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি ১৪২২)

 

আরও পড়ুন: বিশ্বের যে ৫ মসজিদ পর্যটকদের কাছে বিস্ময়ের

 

৪. নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মাধ্যমে মাসেহ ভেঙে যায়। (বাদায়ে ১/৪৬) ৫. উভয় মোজার কোনো একটিতে বেশিরভাগ অংশে পানি পৌঁছে গেলে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা ১৩৯৬)

 

মোজার ওপর মাসেহ সংক্রান্ত আরও কিছু মাসয়ালা

 

১. কাপড়ের মোজার ওপর চামড়ার মোজা পরিধান করলেও মাসেহ করা জায়েজ। অবশ্য চামড়ার মোজা পায়ের সঙ্গে এঁটে থাকতে হবে এবং এতে অন্যান্য শর্ত থাকতে হবে। ২. চামড়ার মোজার ওপর পরিহিত কাপড়ের মোজায় মাসেহ করা জায়েজ নয়। বরং কাপড়ের মোজা খুলে সরাসরি চামড়ার মোজার ওপর মাসেহ করতে হবে।

 

৩. মুসাফির তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মাসেহ করতে পারবেন। আর তিন দিনের হিসাব শুরু হবে মোজা পরিধানের পর সর্বপ্রথম অজু ভেঙে যাওয়ার সময় থেকে। এটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ওয়াক্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।

 

৪. অজু থাকা অবস্থায় যদি মাসেহের সময়সীমা শেষ হয়ে যায় তাহলে মোজা খুলে উভয় পা ধুয়ে নিলেই চলবে। পুনরায় অজু করা আবশ্যক নয়। তবে নতুন করে অজু করে নেওয়া উত্তম।

 

৫. কোনো ব্যক্তি যদি সুস্থাবস্থায় পূর্ণ অজু করে মোজা পরিধান করে অতঃপর সে মাজুর (অসুস্থ কিংবা অক্ষম) হয়ে যায়, তাহলে সে মুকিম হলে এক দিন এক রাত পর্যন্ত সুস্থ ব্যক্তির মতো মাসেহ করতে পারবে।

 

৬. চামড়ার মোজার ওপর মাসেহ জায়েজ। কিন্তু চামড়া ছাড়া সুতা বা পশমের তৈরি যেসব মোজা সচরাচর পাওয়া যায় এর ওপর মাসেহ সহিহ নয়। তবে সুতা বা পশমের মোজায় নিম্নোক্ত শর্ত পাওয়া গেলে তার ওপর মাসেহ জায়েজ।

 

শর্তগুলো হচ্ছে- ক. মোজা এমন মোটা ও পুরু হওয়া যে, জুতা ছাড়া শুধু মোজা পায়ে দিয়ে তিন মাইল পর্যন্ত হাঁটা যায়। এতে মোজা ফাটে না এবং নষ্টও হয় না। খ. পায়ের সঙ্গে কোনো জিনিস দ্বারা বাঁধা ছাড়া তা লেগে থাকে এবং তা পরিধান করে হাঁটা যায়। গ. মোজা এমন মোটা যে, তা পানি চোষে না এবং তা ভেদ করে পানি পা পর্যন্ত পৌঁছায় না। ঘ. তা পরিধান করার পর মোজার ওপর থেকে ভেতরের অংশ দেখা যায় না। সচরাচর ব্যবহৃত সুতা বা পশমের মোজায় যেহেতু এসব শর্ত পাওয়া যায় না তাই এর ওপর মাসেহ জায়েজ হবে না।

 

৭. প্লাস্টার বা ব্যান্ডেজের ওপর মাসেহ করে এবং অন্য পা ধুয়ে চামড়া জাতীয় মোজা পরা হলে পরবর্তী অজুর সময় থেকে ওই মোজার ওপর মাসেহ করা যাবে। মাসেহের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে উভয় মোজা খুলে পুনরায় ব্যান্ডেজের ওপর মাসেহ করে নেবে এবং অপর পা ধুয়ে নেবে।

 

আরও পড়ুন: পবিত্র কোরআনে রানি বিলকিসের ঘটনা ও আমাদের শিক্ষা

 

তবে অজুর সময় মাথার ওপর মাসেহের সময় পাগড়ি, টুপি এবং বোরকার ওপর মাথা মাসেহ করা জায়েজ নেই। এক্ষেত্রে খালি মাথা মাসেহ করতে হবে, অনুরূপভাবে হাতমোজার ওপর মাসেহ করা জায়েজ নেই।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন