বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনায় পৌরসভা চত্বরে প্রতিবাদ সভা করেছেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এর আগে বুধবার (৯ এপ্রিল) তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন হিসাব রক্ষক মো. মোকলেছুর রহমান।
প্রতিবাদ সভায় রাজবাড়ী পৌর কর্মচারী সংসদের আহ্বায়ক ও পৌরসভার সহকারী কর নির্ধারক মো. নুরুন্নবী বাবু, লাঞ্ছিতের শিকার হিসাব রক্ষক মো. মোকলেছুর রহমান ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তায়েব আলী বক্তব্য দেন।
হিসাব রক্ষক মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘‘বুধবার (৯ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে আমি নিজ অফিস কক্ষে বসে কাজ করছিলাম। এ সময় পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মিয়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা তায়েব আলীর কক্ষে প্রবেশ করে আমাকে উদ্দেশ্য করে গালমন্দ করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তিনি এক কর্মচারীর মাধ্যমে আমাকে ওই কক্ষে ডেকে পাঠান। আমি নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে যাওয়া মাত্রই তোফাজ্জেল হোসেন বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আমার হাত ধরে টানাটানি করে বলতে থাকেন, ‘চল তোকে ডিসির (জেলা প্রশাসক) কাছে যেতে হবে’। কেন যেতে হবে এবং গালমন্দ করছেন কেন? জিজ্ঞাসা করা মাত্র তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার গালে চড় মারেন। এসময় পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মচারীরা তাকে নিবারণ করে আমাকে আমার কক্ষে নিয়ে যান।’’
মোকলেছুর রহমান আরও বলেন, ‘তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া কী কারণে আমার গায়ে হাত তুলেছেন এবং গালমন্দ করছিলেন তা আমি জানি না। সম্পর্কে তিনি আমার আপন মামাতো ভাই, বয়সেও আমার থেকে কয়েক মাসের বড়। পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত থানায় দায়েরকৃত আমার অভিযোগ প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।’
আরও পড়ুন: মামলায় জিতে অবশেষে ইউপি সদস্য পদ ফিরে পেলেন বিএনপি নেতা ফজলুল
পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তায়েব আলী বলেন, ‘সাবেক মেয়র তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া আমার কক্ষে প্রবেশ করার আগে হিসাব রক্ষক মোকলেছুর রহমানের সঙ্গে তার মুঠোফোনে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। তিনি আমার কক্ষে ঢুকে মোকলেছুর রহমানকে ডেকে পাঠান এবং গালমন্দ করতে থাকেন। কক্ষে আসার কয়েক মিনিটের মধ্যে আকস্মিকভাবে তিনি মোকলেছুর রহমানের গালে চড় মারায় আমরা হতভম্ব হয়ে পড়ি। এ ঘটনায় মোকলেছুর রহমান থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। পৌরসভার পূর্বের কোনো বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার মতো একজন রাজনৈতিক নেতা এবং সাবেক জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এমন আচরণ কাম্য নয়। আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি এবং বিচারের দাবি করছি।’
রাজবাড়ী পৌর কর্মচারী সংসদের আহ্বায়ক মো. নুরুন্নবী বাবু বলেন, ‘এ ঘটনার সঠিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। তারা একে অপরের আত্মীয় হলেও সেটা তাদের পারিবারিক বিষয়। তাই বলে কার্যালয়ে এসে লাঞ্ছিত করবেন আর আমরা মেনে নেব তা হবে না। আমরা সাবেক মেয়র তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার এমন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং বিচার দাবি করছি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘মোকলেছুর রহমান সম্পর্কে আমার আপন ফুপাতো ছোট ভাই। অন্যায় করলে একটু শাসন করতেই পারি। পারিবারিক বিষয় নিয়ে আমার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। যেহেতু আমি পৌরসভার মেয়র ছিলাম। পৌরসভায় দেখা হলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে একটা চড় মেরেছি।’
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত-সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’