পুরুষদের মধ্যে ডিপ্রেশন ও বাড়ছে দ্রুত আত্মহত্যার হার, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

১ সপ্তাহে আগে
সমাজে পুরুষকে শেখানো হয় শক্ত, অশ্রুহীন এবং সাহসী হিসেবে বেড়ে উঠতে। ফলে মনের কথা প্রকাশের ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা রয়েছেন বরাবরই পিছিয়ে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তও বলছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের মধ্যে ডিপ্রেশন, উদ্বেগ ও আত্মহত্যার হার দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু মানসিক চিকিৎসা নিতে সবচেয়ে কম আগ্রহী তারা। কেন পুরুষরা পারেন না মনের কথা প্রাণ খুলে বলতে? আজ বিশ্ব পুরুষ দিবস। পুরুষদের সেই সব কথা তুলে ধরেছে সময় সংবাদ।

পুরুষ কাঁদে নাকি! ছেলেদের এত দুর্বল হলে চলে? তুমি পুরুষ মানুষ, সাহস দেখাও! আরে বাবা পুরুষের কষ্ট দেখাতে নেই, লুকিয়ে রাখতে হয়। ছেলে মানুষ মেয়েদের মতো কোমল হয় নাকি? এমন সব শব্দের ছকে পুরুষের দুঃখগুলো আড়াল হয় লজ্জার দেয়ালে। কিন্তু সমাজ কী আদৌ ভাবে মানুষ হিসেবে তারও হৃদয় আছে? তারও ব্যথা হয়, ভয় হয়? কখনো কখনো সেই কষ্টগুলোই চুপচাপ গলায় আটকে রূপ নিতে পারে ভয়ঙ্কর মানসিক অবসাদে?

 

রিমেল নামের এক ব্যক্তি কাজ করছেন বেসরকারি ব্যাংকের একজন কর্মী হিসেবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে একের পর এক চেষ্টা করেও পাচ্ছিলেন না কাঙ্ক্ষিত চাকরির দেখা। বন্ধুরা যখন এগিয়ে যাচ্ছিল সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে, রিমেল তখন ধীরে ধীরে গুঁটিয়ে নিচ্ছিলেন নিজেকে। একসময় সেই অস্থিরতা, ব্যর্থতার ভয় রূপ নেয় গভীর এক মানসিক অবসাদে। তবে ভেতরের সেই ভাঙচুর অজানা এক চাপে বলতে পারেননি পরিবার কিংবা বন্ধুমহলেও। এমন অনেক ঘটনা রয়েছে সমাজের ভেতরে।  

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, পুরুষদের মধ্যে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ আর আত্মহত্যার হার দিন দিন বাড়ছে। ২০২১ সালের একটি জরিপ বলছে বিশ্বজুড়ে প্রতি ১ লাখ পুরুষে আত্মহত্যার হার প্রায় ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে চিকিৎসা নিতে নারীদের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম আগ্রহী পুরুষরা।

 

আরও পড়ুন: যৌন হেনস্তার অভিযোগে আটক ঢাবি শিক্ষককে আদালতে চালান

 

অন্যদিকে ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়ষ্ক পুরুষেরাও। গবেষণা বলছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মজীবন, সামাজিক সম্পর্ক ও সঙ্গ হারিয়ে ফেলার কারণে প্রায় ৫৫ শতাংশের মধ্যে দেখা যায় বিষণ্ণতার লক্ষণ।

 

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে সমাজে প্রচলিত কিছু ধারনাই অনেক পুরুষকে বাধা দেয় আবেগ প্রকাশে।

 

ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি বিভাগ) ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের মিয়া বলেন, 

সমাজ, পরিবার এবং চাকরি ক্ষেত্রগুলো সামলাতে গিয়ে পুরুষ আসলে নিজের কষ্টের কথা বলতে ভুলে যায়। চিকিৎসা ভাষায় এটার নাম হলো তারা (পুরুষেরা) ভেতরে রেখে দেয়া। এতে দেখা যায় বেশিরভাগ সময় পুরুষরা মানসিক বিষাদে ভোগে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবেগ লুকিয়ে রাখা নয় তা প্রকাশের সুযোগই পারে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে এবং পরিবার ও সমাজে সুস্থ পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে। সামাজিক গদবাধা ধারনা ভেঙে এখন সময় এসেছে ছেলেদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবারও।

 

সমাজ বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, 

পুরুষের মধ্যে একটা পর্দা তৈরি হয় সেটা হলো সামাজিক পর্দা। যেমন তারা সব সময় ভাবে এই কথাটা বলা ঠিক হবে না, আমি এটা সমাধান করতে পারলাম না, আমি ছোট হয়ে গেলোম, আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম। এই যে তার মধ্যে আগে থেকে ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার চিন্তা, সেই চিন্তা থেকে সে চেষ্টা করে সব কিছু থেকে লুকিয়ে যেতে।

 

এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, শক্ত থাকার চাপ নয় বরং প্রয়োজন বোঝাপড়া, কথা বলার মুক্ত পরিবেশ। কারণ, মানসিক সুস্থতা কোনো লিঙ্গ নয় এটি প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। 
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন