১৯৬২ সালে কর্ণফুলী নদীতে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে সৃষ্ট ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদ এক সময় রুই, কাতল, মৃগেলের মতো দেশি কার্পজাতীয় মাছের বিশাল ভাণ্ডার ছিল। বর্তমানে জেলার প্রায় ২৭ হাজার জেলে পরিবার এই হ্রদের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
তবে হ্রদে দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করায় পলি জমে ধ্বংস হয়ে গেছে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। এতে হ্রদের দেশীয় মাছের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এ অবস্থায় হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন পুনরুদ্ধারে বিএফডিসি ২০১৭ সালে নিজস্ব হ্যাচারি স্থাপন করে।
বিএফডিসির তথ্যমতে, প্রায় ২৮ একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা এ হ্যাচারিতে ৮টি নার্সারি ও ২টি ব্রুড পুকুর রয়েছে। এখানে হালদা ও কাপ্তাই হ্রদের উন্নত জাতের রুই, কাতল ও মৃগেল মাছ ব্রুড পুকুরে সংরক্ষণ করা হয় এবং সেখান থেকে ডিম সংগ্রহ করে রেণু উৎপাদন করা হয়।
তবে পুকুরের স্বল্পতার কারণে হ্যাচারির ১০০ মেট্রিকটন উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে কেবল ৭০ মেট্রিকটন পোনা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পুকুরে থাকছে না পানি, মাছ সংকট ঠাকুরগাঁওয়ে
হ্যাচারি ইনচার্জ মো. ইসমাইল বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যা হলো পুকুরের সংকট। আমরা চাইলেও পুরো সক্ষমতা অনুযায়ী পোনা উৎপাদন করতে পারছি না। বর্তমানে সর্বোচ্চ ৭০ মেট্রিকটন পোনা উৎপাদন করে এক বছর লালনপালন শেষে হ্রদে অবমুক্ত করি। যদি আরও পুকুর পাওয়া যায়, তাহলে আমরা ১০০ মেট্রিকটন পোনা উৎপাদন ও অবমুক্ত করতে পারবো, যা হ্রদের মাছ উৎপাদন বহুগুণে বাড়াবে।’
বিএফডিসি রাঙামাটি শাখার ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, ‘২০১৭ সালের আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে পোনা এনে কাপ্তাই হ্রদে অবমুক্ত করা হতো, যা পানির তারতম্যের কারণে বেঁচে থাকতো না। সেই সমস্যা সমাধানের জন্যই হ্যাচারি স্থাপন করা হয়। তবে পুকুরের সংকট এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছি। তাদের কিছু পুকুর রয়েছে, সেগুলো লিজ বা ভাড়া নেয়ার বিষয়ে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি পরিকল্পনামাফিক এসব পুকুর ব্যবহার করা যায়, তাহলে পোনা উৎপাদন এবং অবমুক্তকরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। এতে কাপ্তাই হ্রদের কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন আবারও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।’