পিঠ ঠেকেছে দেয়ালে, দুঃখগাথা জীবন গল্পে রাহিমার সঙ্গী অটোরিকশা

২ সপ্তাহ আগে
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকের আসনে রাহিমা। ছুটে চলেছেন প্রতিনিয়ত। রিকশার চাকার সমান্তরালে যেন ঘুরছে তার জীবন। সকল প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে নিজের আত্মকর্মসংস্থানের পথ বেছে নিয়েছেন এই নারী। তার এমন কাজকে সাহসিকতার গল্প হিসেবে দেখছে প্রশাসন ও স্থানীয়রা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই দেখা যায় রাহিমাকে। সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েন। নারী অটোরিকশা চালককে দেখে সবার মনেই আগ্রহ জাগে, কেন এমন জীবিকার পথ বেছে নিলেন তিনি?

 

জানা যায়, রাহিমার স্বামী প্রবাসী। তবে দীর্ঘদিন খোঁজ নেন না পরিবারের। তাই চার সন্তান নিয়ে অথৈ জলে পড়েন! চালিয়ে নিতে পারছিলেন না ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা।

 

সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলের পরীক্ষার ফি জোগাড় নিয়ে শুরু হয় টানাপোড়েন। ফি দিতে না পারলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না ছেলে, এমন অবস্থায় নগদ টাকার আশায় রাস্তায় নামেন রাহিমা।

 

নিজে নিজেই শেখেন অটোরিকশা চালানো। এরপর নেমে পড়েন ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা নিয়ে। এতে প্রতিদিন ৫০০ টাকার মতো আয় করতে পারেন। তা দিয়েই কোনো রকম চলে সংসার।

 

আরও পড়ুন: কেন্দুয়ায় অটোরিকশা উল্টে নারী নিহত

 

‘কম যন্ত্রণায় তো আর রাস্তায় নামি নাই, অনেক কষ্ট সহ্য করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার তো বাঁচতে হবে, কে কী বলল তা দেখার প্রয়োজন নাই। কেউ তো আমার ঘরে এনে খাবার দিয়ে যায় না। যা আয় করি তা দিয়ে আমার সন্তানের পড়াশোনা চলছে, খাবার চলছে।’ বলেন রহিমা।

 

রিকশা চালাতে গিয়ে কোনো সমস্যা হয় কি না? জানতে চাইলে রাহিমা বলেন, ‘রাস্তা ঘাটে তো কত কথাই শুনতে হয়। কেউ বলে কেন রিকশা চালাই, ঠিক মতো সাইড দেয় না। অযথা বিড়ম্বনা করে। তবে অনেকে সহযোগিতাও করেন। বুঝিয়ে দেন কীভাবে চালাতে হয়। ভালোর পাশাপাশি কিছু খারাপ মানুষ তো থাকেই। তবে খারাপের চাইতে ভালোর সংখ্যাটাই বেশি।’

 

স্থানীয় বাসিন্দা আবু নাঈম বলেন, ‘রাহিমা আপাকে প্রায়ই দেখি। নারী হয়ে রিকশা চালানো আমাদের সমাজে খুব একটা দেখা যায় না। ব্যতিক্রম এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি। আমরা এলাকাবাসী সব সময় ওনাকে সমর্থন দিয়ে পাশে থাকব।’

 

আরও পড়ুন: নরসিংদীতে চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই, গ্রেফতার ৩

 

রাহিমার এমন কাজকে নারীর আত্মকর্মসংস্থানের উদাহরণ হিসেবে দেখছে প্রশাসন। তার নিরাপত্তা আর সহযোগিতায় সব সময় পাশে থাকার আশ্বাস দেন ইউএনও ফেরদৌস আরা।

 

ইউএনও ফেরদৌস আরা বলেন, ‘রাহিমার এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। কারো কাছে হাত না পেতে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন। নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের এক অনন্য উদাহরণ রাহিমা। প্রশাসনে পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে তাকে। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। যে কোনো সমস্যায় আমি রাহিমার পাশে আছি।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন