পাহাড়িয়াদের উচ্ছেদচেষ্টার তদন্ত শুরু, উচ্ছেদকারীর ‘খাসি জবাই’ বন্ধ!

৩ সপ্তাহ আগে
রাজশাহীতে ৫৩ বছরের পাহাড়িয়াদের উচ্ছেদ করে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখলের চেষ্টার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার ভূমি অফিস ও স্থানীয় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে শুক্রবারের খাসি জবাই করে খাওয়ার আয়োজন বন্ধ করা হয়েছে।
 

রাজশাহীর মোল্লাপাড়ায় প্রায় ৫৩ বছর ধরে রয়েছে পাহাড়িয়াপাড়া। এখানে পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের ১৩টি পরিবার বসবাস করেন। সম্প্রতি জমির মালিকানা দাবি করে স্থানীয় সাজ্জাদ আলী তাদের উচ্ছেদে তৎপরতা শুরু করেন। রোববার মহল্লা ও বাড়ি-ঘর খালি করা হবে, সে উপলক্ষে শুক্রবার খাসি জবাই করে পাহাড়িয়াদের খাওয়ানোর আয়োজনও করে।
 

পাহাড়িয়াদের দাবি, এ জমির মালিক ছিলেন ইন্দ্রা ধুপি নামের একজন ধোপা। মুক্তিযুদ্ধের পর ভারত থেকে ফিরে আসা ছয়টি পাহাড়িয়া পরিবারকে তিনি এখানে বাড়ি করতে দেন। জায়গাটি তখন ইন্দ্রা ধুপার বাথান নামে পরিচিত ছিল। ইন্দ্রা ধুপা নিঃসন্তান ছিলেন।
 

আরও পড়ুন: নারী হেনস্তার প্রতিবাদে শিবিরের মানববন্ধন


ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, হড়গ্রাম মৌজায় ৫১ নম্বর জে এল ও ১২৯০ নম্বর দাগে জমিটির পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৯৪ শতক। ৪০৫ নম্বর আরএস খতিয়ানে জমিটির মালিক হিসেবে লেখা রয়েছে রাজশাহীর কাজীহাটা এলাকার গাজিয়া রজকিনি ও ময়মনসিংহের কোতোয়ালির মনিতারা রজকিনি।
 

তবে ১৯৯৪-৯৫ সালে এ জমি খারিজ হয়েছে সাজ্জাদ আলী, সৈয়দ আলী, ইমতিয়াজ ও ফাহামিদার নামে। সাজ্জাদ আলী পুলিশের সামনে যে দলিল হাজির করেন, সেখানে দেখা যায়, মধুসূদন দাস, দিলীপ দাস, আমমোক্তার সূর্য কমল দাস, প্রকাস দাস ও তৃপাল রজকের কাছ থেকে তাঁরা কিনেছেন।
 

ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, আরএস রেকর্ডে গাজিয়া রজকিনি ও মনিতারা রজকিনির কাছ থেকে সাজ্জাদের কাছে সরাসরি দলিল হলে কোনো প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু মধুসূদন দাস, দিলীপ দাস, আমমোক্তার সূর্য কমল দাস, প্রকাস দাস ও তৃপাল রজকের নামে জমি কীভাবে হয়েছিল, আগে সে দলিল দরকার। ওই দলিল না পাওয়া গেলে সাজ্জাদের কাছে থাকা দলিল থাকা প্রশ্নবিদ্ধ। এ দলিল সঠিক কি না, সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে।
 

স্থানীয় সাজ্জাদ আলী দাবি করেন ইন্দ্র ধুপি মৃত্যুর আগে এ জমি তার কাছে বিক্রি করে গেছেন। এনিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বসলেও নকল দলিল দাবি করে বিষয়টি মিমাংসা হয়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবারও উচ্ছেদ চেষ্টা শুরু করে সাজ্জাদ।
 
আরও পড়ুন: ছাত্রীদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য: রাবির সেই ছাত্রদল নেতা আজীবন বহিষ্কার


বৃহস্পতিবার সকালে পাহাড়িয়াদের মহল্লায় যান পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার লোকজন। পুলিশ সেখানে সাজ্জাদ আলীকে ফোন করে ডেকে আনেন। পুলিশ সকল পক্ষের কথা শোনেন।
 

পাহাড়িয়ারা জানান, এটা তাদের জন্মস্থান। তারা সেখানেই থাকতে চান।
 

সাজ্জাদ জানান, এই জমির বৈধ দলিল রয়েছে। তিনি নিয়মিত খাজনা দিচ্ছেন। পুনর্বাসনে আদিবাসীদের ৩০ লাখ টাকা দিয়েছেন। প্রথম বাড়ি করা ছয়টি পরিবার ধরে প্রতিটি বাড়িতে দিয়েছেন ৬ লাখ করে টাকা। ছয় পরিবার এখন বেড়ে হয়েছে ১৬টি। মোট ৩০ লাখ টাকা ১৬ পরিবারে ভাগ হয়েছে।
 

খাসি জবাই করে খাওয়ার আয়োজনের বিষয়ে সাজ্জাদ বলেন, ‘তারা এখানে এত দিন ছিল। চলে যাচ্ছে। আমি তাদের মুরগি খাওয়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারাই বলেছে যে, খাসি খাওয়াতে হবে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আগামীকাল শুক্রবার কোনো ‘খাওয়া’ হবে না সেখানে।’
 

নগরের বড়কুঠি ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসন তাকে তদন্ত করতে বলেছে। তিনি সার্ভেয়ারকে পাঠিয়েছেন। সবকিছু তদন্ত করে একটা প্রতিবেদন দেবেন।
 

নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি আজিজুল বারী সাজ্জাদ বলেন,  যেটাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না, সেটা করব। আপাতত এখানকার বাসিন্দারা এভাবেই থাকবেন। জমির কাগজপত্র চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন