আরব দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানের দক্ষিণে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এই জলভাগের ভৌগোলিক নাম পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করে আসছে। অন্যদিকে ইরান তার দেয়া ঐতিহাসিক নামটি ধরে রেখেছে। ১৬ শতক থেকে পারস্য উপসাগর এই নামে পরিচিত। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ‘আরব উপসাগর নামটি বেশি প্রচলিত।
ইরান পূর্বে পারস্য নামে পরিচিত ছিল। দেশটির সরকার ২০১২ সালে মানচিত্রে উপসাগরের নাম অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের গুগল ম্যাপে এই জলভাগকে পারস্য উপসাগর ও আরব উপসাগর উভয় নামেই চিহ্নিত করা হয়েছে। আর অ্যাপলের ম্যাপে এটাকে কেবল পারস্য উপসাগর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী বহু বছর ধরে তাদের বিবৃতি এবং ছবিতে একতরফাভাবে আরব উপসাগর নামটি ব্যবহার করে আসছে। ইরানিদের কাছে এই উপসাগরের নাম আবেগগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, যারা পারস্য সাম্রাজ্যের শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাসকে শ্রদ্ধা করে।
আরও পড়ুন: সমুদ্রে ডুবল মার্কিন নৌবাহিনীর আরেক যুদ্ধবিমান
২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদের সময় ট্রাম্প এই জলভাগকে আরব উপসাগর বলে অভিহিত করেন। যার প্রেক্ষিতে একটা কেলেঙ্কারির সূত্রপাত হয়। তৎকালীন ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ট্রাম্পকে ‘ভূগোল অধ্যয়ন’ করার পরামর্শ দেন।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর গত জানুয়ারিতে মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর রাখেন। এবার পারস্য উপসাগরের নাম বদলের পায়তারা শুরু শুরু করেছেন। এ নিয়ে ইরানিরা এরই মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের পারস্য উপসাগরের নাম পরিবর্তনের পরিকল্পনা ইরান ও এর জনগণের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাবের ইঙ্গিত দেয় এবং আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
পারস্য উপসাগরের উত্তরে ইরান, পশ্চিমে কুয়েত ও ইরাক এবং দক্ষিণে সৌদি আরব, বাহরাইন, আমিরাত ও কাতার অবস্থিত। এটির আয়তন ২ লাখ ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং মেক্সিকো উপসাগর এবং হাডসন উপসাগরের পরে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম উপসাগর।
আরও পড়ুন: সানা বিমানবন্দর ‘অকেজো’ করার দাবি ইসরাইলের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি হুতির
পারস্য উপসাগর হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে ওমান সাগরের সাথে এবং এর মধ্যদিয়ে খোলা সমুদ্রের সাথে সংযুক্ত এবং এর গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপগুলোর মধ্যে রয়েছে: খার্গ, আবু মুসা, তুনবে কোচাক, তুনবে বোজোর্গ, কিশ দ্বীপ, কেশম দ্বীপ ও লাভান- যার সবকটিই ইরানের অন্তর্গত।
পারস্য উপসাগর ও এর উপকূল তেল ও গ্যাসের সমৃদ্ধ মজুদ। তেল পরিবহনের পথ কুয়েত, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোর মধ্যদিয়ে। এই কারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হয়।
]]>