পাবনায় যেতে না চাওয়ায় এলাকাবাসীর ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা

৩ সপ্তাহ আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মানববন্ধনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম আজম আহত হন। তিনি স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এসময় পরিষদ চত্বরে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

ঘটনার পেছনের কারণ

 

মানববন্ধনকারীদের ভাষ্য, পদ্মা নদীর কারণে চরসাদিপুর ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে জেলা ও উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন। যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হলেও এখানকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করছেন। কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহল ব্যক্তিগত স্বার্থে ষড়যন্ত্র করে চরসাদিপুরকে পাবনা জেলার সঙ্গে যুক্ত করতে চায়।

 

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বুধবার সকাল ১১টায় পাবনা প্রশাসনের একটি দল চরসাদিপুর পরিদর্শনে আসার কথা ছিল। এর প্রতিবাদে সকাল ১০টায় এলাকাবাসী ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনকারীদের অভিযোগ, ঠিক ওই সময় দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে পাবনার দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় এবং সমাবেশস্থলের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে।

 

মানববন্ধনের স্লোগান ও বক্তব্য

 

পরে দুপুর ১২টার দিকে ‘মা, মাটি, মোহনা—আমরা পাবনা যাব না’ ও ‘স্থানান্তর নয়, উন্নত যোগাযোগ চাই’ স্লোগানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। আহত বিএনপি নেতা গোলাম আজম বলেন, ‘স্থানান্তরের আগেই পাবনার সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। স্থানান্তরের পর হলে তারা নানাভাবে হয়রানি করবে।’

 

স্থানীয় কৃষক হামিদ সরদার (৭৫) বলেন, ‘পদ্মানদীর কারণে চলাচলে ভোগান্তি থাকলেও আমরা শান্তিতে আছি। আমাদের পূর্বপুরুষরা কুমারখালীর নামেই থেকেছেন, আমরাও থাকতে চাই।’

 

আরও পড়ুন: অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে পদ্মার পানি, আতঙ্কে অর্ধলাখ মানুষ

 

চর সাদীপুর ইউনিয়নের প্রেক্ষাপট

 

১৯৯৮ সালে গঠিত চরসাদিপুর ইউনিয়নের আয়তন প্রায় ২৫ বর্গমাইল। ৯টি গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। এটি উপজেলা শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার এবং জেলা শহর থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে। উত্তরে ও পশ্চিমে রয়েছে পাবনার হেমায়েতপুর ও দৌগাছি ইউনিয়ন। ১৯৬২ সালের আগ পর্যন্ত এটি পাবনা সদরের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

 

জানা গেছে, প্রায় ৬ কিলোমিটার পদ্মা নদী পেরিয়ে জেলা ও উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এখানকার বাসিন্দারা। বর্ষায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ইঞ্জিনচালিত নৌকা, আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি খরচ হয়।

 

প্রশাসনের বক্তব্য

 

চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেছের আলী খাঁ বলেন, ‘পরিষদ চত্বরে হট্টগোল হয়েছে। পাবনা প্রশাসন আজ আসবেন না।’

 

কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা নদীর কারণে চরসাদিপুর একটি দুর্গম এলাকা। সাদিপুরকে পাবনার সঙ্গে যুক্ত করা যায় কি না তা দেখতে পাবনা প্রশাসনের একটি দল আসার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয়দের হট্টগোলের কারণে তারা আসেননি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন