পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারে তৎপরতা, পথ কতটা সহজ?

১ সপ্তাহে আগে
এখন পর্যন্ত পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটির সংস্থাগুলো প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা জব্দ করেছে। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে রূপান্তরিত সম্পদের খোঁজে ২০টি দেশে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। উত্তর পেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের আরও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের সূত্র পাওয়া যাবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, বিদেশে পাচারের অর্থ বিনিয়োগের ফলে অর্জিত লাভও মূলত বাংলাদেশের, কিন্তু তা সহজে পাওয়া যাবে না।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তের খোঁজে এবার যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর হংকং ও সাইপ্রাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এমএলএআর পাঠিয়েছে দুদক। এদিকে পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসাব ও সম্পদ জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ)।

 

একইভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থ পাচারের তথ্য খুঁজতে স্লোভাকিয়ায় এমএলএআর পাঠানো হয়েছে। নজরুল ইসলামের নাসা গ্রুপের বাণিজ্যিক লেনদেনের আড়ালে অর্থ পাচারের তথ্য চেয়ে লুক্সেমবার্গ, এসআলম গ্রুপের বাণিজ্যিক লেনেদেনের নামে বিদেশে সম্পদ তৈরির তথ্য চেয়ে ব্রিটিশ ভার্জেনিয়া আইল্যান্ড, বেক্সিমকো ও সালামান এফ রহমানের বিষয়ে তথ্য চেয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুরে ও যুক্তরাজ্য, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সম্পদের তথ্য চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এমএলএআর পাঠিয়েছে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটি। এছাড়া পাচার করা অর্থ অনুসরণ করতে গিয়ে থাইল্যান্ডেও অর্থ পাচারের সূত্র মিলেছে। এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ২০টি দেশে তথ্য চেয়ে এমএলএআর পাঠিয়েছে দুদক।

 

আরও পড়ুন: পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির অর্থ কেন ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশ?

 

সিআইডি জানায়, অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা জব্দ করেছে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটি। এমএলএরের উত্তর মিললে পাওয়া যাবে আরও সম্পদ।

 

সিআইডি প্রধান মো. ছিবগাতউল্ল্যাহ বলেন, ট্রেড-ভিত্তিক মানি লন্ডারিং ধরতে দীর্ঘ সময় লাগে- হুন্ডি, আন্ডার ইনভয়েস ও ওভার ইনভয়েসের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে অর্থ পাচার করছে। তবে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ ফ্রিজ ও ক্রোক করা হয়েছে।

 

তিনি আরও জানান, অর্থ ফেরানোর কাজটি চলছে এবং অফিসাররা দিনরাত পরিশ্রম করে প্রতিটি কেস খতিয়ে দেখছেন। যে অর্থগুলো লন্ডারিং করে পাঠানো হয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই- দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তৎপরতা অব্যাহত থাকবে, যদিও প্রক্রিয়াটি জটিল।

 

টিআইবি বলছে, পাচার হওয়া অর্থ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বিনিয়োগ হয়েছে। ফলে সে সব বিনিয়োগের লভ্যাংশের মালিকও বাংলাদেশের। আইনি তৎপরতার সঙ্গে তাই বাড়াতে হবে কূটনৈতিক তৎপরতাও।

 

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে গেছে ইংল্যান্ড, দুবাই, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দেশে। এসব দেশে যে অর্থগুলো গেছে, তা মূলত অবৈধ হলেও সেখানে বৈধতা পেয়েছে। অর্থাৎ আইনের লঙ্ঘন হয়েছে, কিন্তু সেই দেশের দিক থেকে বৈধ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে শুধু সরবরাহ নেই, চাহিদাও আছে। অর্থ বাংলাদেশ থেকে বাইরে গেলে, সেখানে সেটি বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তাই সেই অর্থ সহজে দেশে ফেরানো যায় না। যদিও সদিচ্ছা বা নৈতিক অঙ্গীকার থাকতে পারে, তবু অর্থ ফেরানো সহজ নয়। এখানে অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া কাজ করছে-এটি বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি পূর্ণ অর্থনীতির অংশ। ফলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা খুবই জটিল।

 

সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর তথ্যমতে, দেশের সম্পদের খোঁজে আরও পাঁচটি এমএলএআর তৈরি রয়েছে পাইপলাইনে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন